কুমিল্লায় বেড়েছে মশার প্রকোপ

শীত কমে যাওয়ার সাথে সাথে মশার উপদ্রব বেড়েছে কুমিল্লায়। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান ডেঙ্গু ঠেকাতে সবার আগে সাধারণ মানুষকে নিজেকে সচেতন হতে হবে। তাদের বাড়ি-ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

এদিকে, গতবছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ঠেকানোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মশা নিধনে মৌসুমের আগেই মাঠে নেমেছে প্রশাসন।

কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সব জায়গাতেই দিনে রাতে এই উৎপাত সমানতালে। তবে মশা কি প্রজাতির তা জানে না কেউ। হঠাৎ করে মশার এমন উপদ্রবে আতঙ্কিত অনেকে। গত কয়েক বছরে ডেঙ্গু জ্বরের যে প্রাদুর্ভাব ছিলো- তা এ বছর ভাবিয়ে তুলছে সাধারণ মানুষকে।

জানা গেছে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্যাম্পাস, অশোকতলা, বজ্রপুর, শাসনগাছা, চর্থা, টমছমব্রিজ, বাঁগিচাগাও, রেইসকোর্স, ছেটরা, চকবাজার, মৌলভী পাড়া, শুভপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় মশার উৎপাত মাত্রা ছাড়িয়েছে।

রাজগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসাইন জানান, রাজগঞ্জ এলাকায় দিনে-রাতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। দিনের বেলাতেও মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়।

তবে সিটি করপোরেশন থেকে সব জায়গাতে মশক নিধন কার্যক্রম এখুনি শুরু করা দরকার বলে জানান তিনি।

দ্বীন মোহাম্মদ নামে আরো একজন জানান, মশার যে উপদ্রব বেড়েছে তা কি ধরনের মশা তা আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে বুঝবো? এখন যে মশা কামড়াচ্ছে তা কি এডিস মশা কি না জানি না। আমার বাসায় শিশু সন্তান আছে, তাকে মশা থেকে বাঁচাতে যতক্ষণ সম্ভব মশারি টানিয়ে রাখা হয়।

গতবছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ১ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে প্রায় ৮শ’ জন চিকিৎসা নিয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা না গেলেও আগস্টের দিকে এ রোগে আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে আশঙ্কাজনক হারে।

এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে আগে থেকেই সতর্ক প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। গতমাসের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের যৌথ সভায় নেয়া হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ।

কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, এডিস মশার লার্ভা বা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার আগে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এই প্রোগ্রামগুলো করা হবে। আর গত বছরের পর্যালোচনায় এবার যদি ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় সেজন্য আমরা আগে থেকেই প্রস্তুত। ডেঙ্গুর জন্য আলাদা একটি ওয়ার্ড খোলা হবে, জরুরি পর্যবেক্ষক দল থাকবে এবং সেবা প্রদানকারী-সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও আলাদা টিম থাকবে।

প্রচলিত ওষধের বাইরে গিয়ে ডেঙ্গুবাহী মশার কীট পর্যালোচনা করে নতুন ওষধ ছিটানোর জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। জানান, পুরোনো বছরের ওষধ এবছর কাজ নাও করতে পারে। তাই স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে পরামর্শ করে সিটি করপোরেশনকে নতুন ওষধ সরবরাহ করতে হবে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে কুমিল্লা সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ড্রেন নালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। সিটি করপোরেশন বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রম চালাচ্ছে। এবছর যেন ডেঙ্গুর প্রকোপ না দেখা দেয় সেজন্য এডিস মশার লার্ভা বিনষ্টকারী ওষধ ছিটানো হচ্ছে।

আরো পড়ুন