কুমি’ল্লায় ভরা মৌসুমেও চ’ড়া সবজির দাম, ক্ষু’ব্ধ ক্রেতারা

ডেস্ক রিপোর্টঃ শীতকালকে বলা হয় সবজির মৌসুম। যার কারণে প্রতি বছরই শীত এলে সকল সবজিরই দাম কম থাকে। অনেক সময় সরবরাহও বেড়ে যায় অধিক হারে, তখন নামমাত্র মূল্যে সবজি কিনে পুরো শীতের মৌসুমেই ক্রেতারা থাকেন স্বস্তিতে। কিন্তু এ বছর সবজির বাজার হাঁটছে উল্টো পথে। সব সময়ের মতো চলমান শীতেও নানা অজুহাতে কমছে না সবজির দাম, বরং দাম বাড়ছে প্রতিনিয়তই।

কুমিল্লাতেও এবার ভরা মৌসুমে চড়া সবজির বাজার। ঘন কুয়াশা আর শীতের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি, পণ্য সরবরাহ কম, পরিবহনে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অজুহাতে ভরা মৌসুমেও কিছুতেই কমছে না সবজির দাম। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারাও।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ, নিউ মার্কেট, রাণীর বাজার, রাজগঞ্জ বাজার, চকবাজার, বাদশা মিয়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচা বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি, বরং কিছু সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে। ভরা মৌসুমে সবজির এই দাম বৃদ্ধিকেও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে মনে করছেন ভোক্তারা। এছাড়া পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতাদের দামের পার্থক্য রয়েছে অনেক। আবার নগরীর বাজারের সঙ্গে গ্রামের বাজারগুলোরও দামে পার্থক্য রয়েছে।

প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫৯ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ফুলকপির পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শীতের সবজির মধ্যে অন্যতম টমেটোর কেজিও ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলু পুরাতন ২৫ টাকা ও নতুন আলু ৩৫ টাকা কেজি। শিমের কাঁচা বিচির কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি ধনিয়া পাতা ১২০ থেকে দেড়শ টাকা

কুমিল্লা নগরীর এসব কাঁচা বাজারের দোকানিদের ভাষ্য, এ বছর পাইকারি বাজারেও সবজির দাম বেশি। এছাড়া যাতায়াত খরচ, খাজনা, পরিবহনে চাঁদা, আর সম্প্রতি ঘন কুয়াশা আর শীতের বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে সবজি নষ্ট হয়ে পড়ার কারণে ভরা মৌসুমে অতিরিক্ত দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

কুমিল্লা নগরীর গোলমার্কেট এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, ‘গত বছরও ২-৩০০ টাকায় এক ভ্যান তরকারি পাওয়া যেত। এ বছর ওই টাকায় ৬/৭ কেজি তরকারিও কিনতে পারি না। যার ফলে কাস্টমারদের এই সময়ের সবজি খাওয়ার চাহিদা পূরণ করতে পারছি না।’

মো.আবু সুফিয়ান নামে একজন বলেন, ‘কুমিল্লার বৃহৎ কাঁচা বাজার হলো নিমসার বাজার। ওই বাজার থেকে এনেই পুরো জেলার বেশির ভাগ ব্যবসায়ী সবজি বিক্রি করেন। অনেক সময় দেখা যায় তারা যেই দামে পাইকারি কিনে আনেন, তার দাম খুচরা বাজারে দ্বিগুণ হয়ে যায়। নিত্য পণ্যের মতো শীতের সবজিও এখন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা।’

কুমিল্লার পাদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় সপ্তাহের রোববার ও বৃহস্পতিবার কাঁচা বাজারের বিশাল একটি হাট বসে। ওই বাজারের নিয়মিত ক্রেতা নগরীর দিশাবন্দ এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘শহরের দামের তুলনায় এখানে দাম কিছুটা কম থাকে। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সবজির মৌসুমেও দাম অনেক বেশি। আর পেঁয়াজের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘কাঁচা বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা থাকা দরকার। চাহিদা অনুপাতে যেন জোগান হয়। হঠাৎ করে একটা পণ্যের দাম বেড়ে গেলে নিম্ন আয়ের মানুষগুলা বেকায়দায় পড়ে যায়। কারণ পণ্যের মতো তাদেরতো আর মাসে মাসে বেতন বৃদ্ধি পায় না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘পচনশীল দ্রব্য বা কাঁচামাল স্থান, কাল ভেদে দামের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ টাকার বেশি লাভ করা যাবে না। যদি নির্দিষ্টভাবে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে আমারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়া আমরা নিজেরাও প্রতিনিয়ত এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা এবং বাজার মনিটরিং করছি।’

আরো পড়ুন