কুমিল্লায় ভাতিজিকে ধর্ষণের মামলায় জামিন পেয়ে চাচার মোটরসাইকেল শোডাউন

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণ মামলার আসামি জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে গলায় ফুলের মালা পরে মোটরসাইকেল শোডাউন ও আনন্দ, উল্লাস করেছে। সোহেল নামে ওই অভিযুক্ত সম্পর্কে নির্যাতিত কিশোরীর চাচা।

শুক্রবার (১৭ জুলাই) এলাকায় অনুসারীদের নিয়ে এমন ঘটনা ঘটায় সে।

এদিকে, তার আনন্দ-উল্লাসের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৪ জুন ওই কিশোরীর বাবা এ ঘটনায় সোহেলের বিরুদ্ধে নাঙ্গলকোট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরদিন (১৫ জুন) তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর কুমিল্লার আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে, গত জুনের শেষদিকে ওই কিশোরী একটি সন্তান প্রসব করে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মাধ্যমে তার সদ্যজাত শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়।

নির্যাতিত কিশোরীর বাবা জানান, গত বছরের নভেম্বরে তার স্ত্রীর ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ৫-৬দিন থাকতে হয়েছিল। তখন বাড়িতে কেউ না থাকায় সোহেল মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। টানা চারদিন ধর্ষণের পর বিষয়টি না বলার জন্য সে কিশোরীকে হুমকি দেয়। ভয়ে মেয়েটি কাউকে কিছু জানায়নি।

এরই মধ্যে তার মা অসুস্থতা নিয়ে মারা যান। কিশোরী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে সালিশ বসলে কিশোরী ওই ঘটনার জন্য সোহেলকে দায়ী করে।

এদিকে, মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) অভিযুক্ত সোহেল জামিনে ছাড়া পেয় শুক্রবার এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাউন করে। এতে ভুক্তভোগী পরিবারটি আতঙ্কে ভুগছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জল হক জানান, ‍‍‍“ধর্ষণের মামলায় জামিন নিয়ে এসে সোহেল মোটরসাইকেল শোডাউন ও উল্লাস করে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেছে। উল্লাসের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করছে।”

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান জানান, “ভুক্তভোগী কিশোরী সোহেলকে ধর্ষক হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। ঘটনা প্রকাশ করলে সে প্রাণনাশেরও হুমকিও দিয়েছে। পরে আমরা বসে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি। এখন আবার শুনেছি সে এলাকায় এসে মোটরসাইকেল শোডাউন ও উল্লাস করছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।”

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

নাঙ্গলকোট থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবার মামলায় ধর্ষক সোহেলকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে জামিন নিয়ে আসার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। মোটরসাইকেল শোডাউন এবং উল্লাসের বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। ”

ওসি আরও বলেন, “কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা এবং সন্তান প্রসবের পর মা ও শিশুর ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়। টেস্টগুলোর রিপোর্ট এখনও ঢাকা থেকে আসেনি। রিপোর্টগুলো পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

আরো পড়ুন