কুমিল্লায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছয় সদস্যকে গণপিটুনি

কুমিল্লার দেবিদ্বারে চাঁদাবাজির অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গণপটিুনি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ছয় হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ভুয়া ডিবি পুলিশ সন্দেহে তাদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বাড়িতে নিয়ে যান।

বুধবার উপজেলার জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধসংলগ্ন গুদারাঘাট মীর বাড়ির বজলু মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের পরিদর্শক আবু বকর ছিদ্দিক, সহকারী উপপরিদর্শক উত্তমবরণ দেবনাথ, সহকারী উপপরিদর্শক আবুল কাসেম, সিপাই মো. শরিফুল ইসলাম, মিঠুন চন্দ্র রবি দাস, গাড়িচালক মো. রফিকুল ইসলাম এই ছয়জন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো একটি জিপ (নং- ঢাকা-মেট্রো ঠ- ১৩-১৬৭৯) নিয়ে জাফরগঞ্জ বাজারে আসেন।

পরে তারা জাফরগঞ্জ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধসংলগ্ন গুদারাঘাট বজলু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে বজলু মিয়ার ছেলে মো. রাসেল ইসলামের খোঁজ করেন। তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মা ও বোনকে চাপ দিতে থাকেন। বলেন যে, রাসেলের খোঁজ না দিলে তাদেরকেই ধরে নিয়ে যাবেন।

এ সময় সেখানে আশপাশের লোকজন উপস্থিত হন। তারা এই ছয়জনকে ভুয়া ডিবির লোক মনে করে বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। এ সময় তিনজন পালিয়ে যান। এরপর স্থানীয় কিছু লোক এসে জনরোষ থেকে বাকি তিনজনকে উদ্ধার করে জাফরগঞ্জ গ্রামে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর রেলওয়ে পুলিশের নিরাপত্তা প্রধান ডিআইজি মো. শাহ আলমের বাড়িতে নিয়ে যান। তিনি তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর কারণে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন।

ডিআইজি মো. শাহ আলম বিষয়টি দেবিদ্বার থানা পুলিশকে জানালে দেবিদ্বার-ব্রাহ্ম্ণপাড়া সার্কেল এএসপি মো. আমিরুল্লাহ ও দেবিদ্বার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে আটক ব্যক্তিদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসেন।

রাসেলের বোন ময়না বলেন, তারা কখনো ডিবির লোক, কখনো সিআইডির লোক আবার কখনো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক বলে দাবি করেন। আমার ভাই মাদকের সঙ্গে জড়িত না হলেও নিজেরাই ঘরে কিছু মাদক রেখে তা উদ্ধার করে ভাইয়ের খোঁজ দেয়ার জন্য আমাদের চাপ দিতে থাকেন। আর মাসোহারার ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমরা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অনেক বাগবিতণ্ডার পর তা সাত হাজার টাকায় নেমে আসে। টাকা না দিলে আমাদের জোর করে তুলে নেয়ার হুমকি দেন। আমরা ঘরে থাকা ছয় হাজার টাকা দিলে তারা ওই টাকা ও মাদক নিয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান এবং ডিআইজি মো. শাহ আলমের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

দেবিদ্বার-ব্রাহ্ম্ণপাড়া সার্কেল এএসপি মো. আমিরুল্লাহ বলেন, কুমিল্লা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছয় সদস্যের একটি টিম দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় মাদক উদ্ধার অভিযানে আসেন। তারা রাসেলের বাড়ি থেকে কিছু মাদকও উদ্ধার করেন।

তিনি বলেন, রাসেলের পরিবারের লোকজনের ভাষ্য হচ্ছে ওদের ওখানে মাদক ছিল না এবং তাদের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা নিয়েছেন। তাদের দেয়া টাকার বর্ণনা অনুযায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজনের মানিব্যাগে থাকা ২টি এক হাজার টাকার নোট ও ৮টি পাঁচ শ টাকার নোট পাওয়া গেলেও তার সাথে আরও টাকা ছিল। তাই সত্যটা নিরুপণ করা কঠিন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা এলে এদের থানা থেকে হস্তান্তর করা হবে। পরবর্তীতে তদন্ত করে তারা ব্যবস্থা নেবেন ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লার ইন্সপেক্টর ব্রজলাল চাকমা জানান,আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।

আরো পড়ুন