কুমিল্লায় লাইসেন্স নিয়ে চাল ব্যবসায়ীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ডেইলিকুমিল্লানিউজ ডেস্কঃ চাল বিক্রেতাদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করায় কুমিল্লায় আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীসহ অটোরাইস মিল মালিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন জানান, খাদ্য অধিদফতরের বেঁধে দেওয়া সময় ২ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে চাল বিক্রেতারা লাইসেন্স করতে হবে। তা না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে।

তিনি আরও বলেন, ২ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৩৫টি পাইকারি, খুচরা এবং অটোরাইস মিল মালিক লাইসেন্সের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন এবং যোগাযোগ করেছেন।

চাল বিক্রেতাদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করায় কুমিল্লার আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা চাল বিক্রেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়ে আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ বলছেন, ‘লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করায় জটিলতা ও খরচ বাড়বে। এই প্রভাব চালের বাজারেও পড়বে’।

আবার অনেকে খাদ্য অধিদফতরের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘তারা মনে করেন খাদ্য অধিদফতর জেলার সব চাল বিক্রেতাকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে পারলে ভবিষ্যতে কুমিল্লার চালের বাজারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে’।

কুমিল্লার একাধিক বাজার কমিটির সদস্যরা জানান, লাইসেন্স নেওয়ার ব্যাপারে চাল ব্যবসায়ীরা বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। ব্যবসা করার জন্য তাদের ফুড ও ট্রেড লাইসেন্স থাকার পরও কেন আবার লাইসেন্স নিতে হবে এ বিষয়টি তাদের কাছে পরিষ্কার না।

আবার তাদের কেউ কেউ লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি এখনও জানেন না বলে জানান।

কুমিল্লা রাণীর বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী হাজী মোশাররফ বলেন, ‘২০০৭ সালে আমি আমার দোকানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি পরে ফুড লাইসেন্স নিয়েছি। আবার লাইসেন্স লাগবে কেন? জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক থেকে আমাদের এখনও কিছু জানায়নি। চাল বিক্রেতাদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এই কথা আমি টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তবে কি কারণে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে বুঝতে পারছি না’।

তিনি বলেন,‘আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখি না। চালের বাজার উঠা নামা এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ধান থেকে চাল উৎপাদনকারীরা। মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে কয়েক দিন পর পর চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠে’।

আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল জানান, চাল বিক্রেতাদের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্তটি সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এবং বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকলে চালের দাম স্বাভাবিক থাকবে।

অন্যদিকে এস আলম অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক শাহ আলম জানান, খাদ্য অধিদফতরের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ আমরা লাইসেন্স করলে সরকার এবং খাদ্য অধিদফতর আমাদের সুখে এবং দুঃখে থাকবেন বলে আমরা মনে করি। প্রতি বছরের তুলনায় এই বছর ধানই পাওয়া যায়নি। প্রায় সময়ই মিল বন্ধ থাকে। কৃষকদের কাছ থেকেও বেশি দামে ধান কিনতে হয়েছে। এ কারণে ধানের বাজারসহ আমাদের সব খরচ মিলিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বেড়েছে।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন বলেন, ‘খাদ্য অধিদফতর লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে ২ অক্টোবর থেকে। কিন্তু এর আগে থেকেই আমরা বাজার মনিটরিং এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। কুমিল্লা একটি বড় জেলা এখানে ব্যবসায়ীও বেশি। আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব স্তরের ব্যবসায়ীদের নোটিশ দিচ্ছি। এরইমধ্যে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স করতে শুরু করেছে। আমরা সবাইকে সহযোগিতা করছি। তবে এরপরও খাদ্য অধিদফতরের বেঁধে দেওয়া সময় মত চাল বিক্রেতারা লাইসেন্স না করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে’।

আরো পড়ুন