কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকের জাদুঘর

শিক্ষার্থীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করাতে নিজের ভাড়া বাসায় বিনামূল্যে দেখার একটি জাদুঘর খুলেছেন কুমিল্লা জিলা স্কুলের এক শিক্ষক। কুমিল্লা নগরীর মগবাড়ি চৌমুহনী এলাকায় ‘কুমিল্লা জাদুঘর’ নামের জাদুঘরটি খোলা হয়। জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা কুমিল্লা জিলা স্কুলের শিক্ষক নাজমুল আবেদীন। প্রতিদিন সকাল ১০টা-বিকাল ৫টা পর্যন্ত সেটি খোলা থাকে।

জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, কলের গান। অনেক আগে তা বিলুপ্ত হয়েছে। তবে যিনি চালিয়েছেন বা শুনেছেন। তিনি কলের গানের সরঞ্জাম দেখলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়বেন। পুরাতন রেডিও সেট, টেলিফোন সেট, বিভিন্ন ধরনের তালা, খড়ম, গরুর কাইর, হরিণের মাথা, পুরনো দিনের ক্যামেরা, শ্রমিকদের কাজের লোহার সরঞ্জাম, পিতলের ডেগসহ চার শতাধিক হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী সরঞ্জাম দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে।

নাজমুল আবেদীন জানান, ‘এসএসসি পড়ার সময় থেকে তিনি প্রাচীন জিনিসপত্র জমাতে থাকেন। এগুলো সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছেন। ৩০ বছরের পরিশ্রমে তিনি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। গত চার বছর ধরে জাদুঘরটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। ভাড়া বাসা নগরীর মগবাড়ি চৌমুহনীর বায়তুস সালামে জাদুঘরটি চলছে। জায়গা কম হওয়ায় তার পারিবারিক বাসায় ঢেঁকি, পালকি, মুটকি ও গরুর গাড়ি রাখা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা নগর উদ্যানের কাছে একটি বড় জায়গা পেলে আরও বেশি সামগ্রী প্রদর্শন করতে পারবেন বলে জানান। তার বাবা ড. জয়নাল আবেদীন লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার বারাইপুরে। কৈশোরে থেকেছেন গ্রামে। তাই গ্রামীণ ঐতিহ্য তাকে খুব টানে।’

তিনি বলেন, ‘কেউ অনুদান হিসেবে বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে যান। সামগ্রীর গায়ে দাতার নাম লিখে প্রদর্শন করেন। অনেকে আবার তার পুরাতন জিনিসটি দিতে চায় না। বার বার গিয়ে চাইতে হয়। কিছু জায়গা থেকে কিনে আনতে হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

পরিবার থেকে প্রথমে এগুলোকে পাগলামি বলা হলেও মানুষের সাড়া থেকে এখন সবাই খুশি। স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলে রুপক ও পুলক তাকে সহযোগিতা করেন।

নাজমুল আবেদীন শিক্ষকতার পরে জাদুঘরে সময় দেন। এ ছাড়া তিনি ফটোগ্রাফি ও লেখালেখি করেন। শেরাটন হোটেলের ‘রূপসী বাংলা’ নামকরণ ও বাংলাদেশ টেলিফোন বোর্ডের স্লোগান তার দেওয়া। তিনি বিভিন্ন কুইজে অংশ নিয়ে তিনটি মোটরসাইকেল, একটি উটসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করানোর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’ তিনি উদ্যোক্তাকে এটির সরকারি অনুমোদন নেওয়ারও পরামর্শ দেন।

সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন

আরো পড়ুন