কুমিল্লায় সাংবাদিক মহিউদ্দিন হত্যার ঘটনাস্থল নিয়ে ধুম্রজাল !

কুমিল্লা সীমান্তে সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার হত্যার ঘটনার ছয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় ঘটনাস্থল হিসেবে জেলার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের হায়দ্রাবাদ উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তাকে বাংলাদেশ অংশে হত্যা করা হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত। বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বক্সনগর এলাকার নগর গ্রামে মহিউদ্দিনকে প্রথমে মারধর ও পরে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা একাধিকবার ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দারা তাদের কাছে এমন বক্তব্যই দিয়েছেন।

মঙ্গলবার গণমাধ্যম কর্মীরা ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন বলেছেন সাংবাদিক মহিউদ্দিনকে হত্যার ঘটনা ঘটে ভারতের অংশে। পরে ৩-৪ জন ব্যক্তি লাশ ধরাধরি করে এনে সীমান্তের বাংলাদেশ পিলারের (পিলার নম্বর ২০৬৩-৬ এস) পাশে ফেলে যায়। মামলার তদন্তে গিয়ে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত হলেও আইনী জটিলতায় ঘটনাস্থল বাংলাদেশ এলাকার হায়দরাবাদ দেখানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী হায়দরাবাদ এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাতে সাংবাদিক মহিউদ্দিন তার ৩ সহযোগী নিয়ে মোটরসাইকেলে প্রথমে হায়দরাবাদ এলাকায় আসেন। পরে তাদের কৌশলে সীমান্তের পাশের ওপারে নগর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমে মহিউদ্দিনের ওপর হামলা চালায় রাজু বাহিনী এবং পরে গুলি করে হত্যার পর লাশ ধরাধরি করে সীমান্ত পিলারের কয়েক গজ দূরে এনে ফেলা হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তারাবি নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ওই যুবকের (মহিউদ্দিন) লাশ দেখে আমরা বিজিবিকে ডেকে আনি, তখনও তার শ্বাস চলছিল। পরে দুই যুবক তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের ওই এলাকার কোনো বাড়ির অর্ধেক বাংলাদেশে এবং অপর অংশ ভারতে পড়েছে। তাই দুই দেশের সীমান্তে চোরাচালানসহ সকল অপরাধ হচ্ছে অবাধেই।’ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রমজান মাসে ইফতার থেকে শুরু করে ভোর রাতে সাহরি পর্যন্ত সীমান্তে যেন সব কিছু ওপেন হয়ে যায়। ঈদকে সামনে রেখে শাড়ি কাপড় আনা হচ্ছে বেশি। এছাড়াও মাদক ও মসলা তো আছেই।

বিজিবির শংকুচাইল বিওপির প্রধান ও নায়েব সুবেদার কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাস্থল কোথায় তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে টহল টিমের বিজিবি সদস্যরা আশংকাজনক অবস্থায় মহিউদ্দিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।’ তিনি বলেন, মাদক পাচার রোধে বিজিবি সব সময় টহল জোরদার করেছে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার সোহান সরকার মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যার ঘটনাস্থল ভারতের অংশ বলে কেউ কেউ বললেও আমরা (পুলিশ) তো তদন্ত করতে সেখানে যেতে পারছি না, তাই যেখানে লাশ পাওয়া গেছে সেখানেই ঘটনাস্থল দেখিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে, তদন্তও এভাবে চলছে।’ তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের হয়েছে। এর পরও কারাগারে থাকা ৪ আসামিদের রিমান্ডে আনা হলে হয়তো আরও কিছু নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার পর দিন গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে থাকা মামলার এজাহার নামীয় আসামি ফরহাদ মৃধা প্রকাশে মনির ও মো. পলাশ মিয়া এবং এজাহার বহির্ভূত নুরু মিয়া ও সুজনের রিমান্ড শুনানি আগামীকাল বুধবার ধার্য করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানির জন্য আদালত এ মামলার প্রয়োজনীয় সব নথি আদালতে উপস্থাপনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কেউ জড়িত আছে কিনা তাও গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যেতে পারে।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলার বুড়িচং উপজেলার ভারত সীমান্তের হায়দরাবাদ এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম নিহত হন। এ ঘটনায় পরদিন তার মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে রাজুকে প্রধান আসামি করে এজাহারনামীয় ৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ জনের বিরুদ্ধে বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে গত শনিবার দিবাগত রাতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রধান আসামি রাজু নিহত হয়েছেন।

সূত্রঃ সমকাল

আরো পড়ুন