কুমিল্লায় স্বামী আটক, জানালেন স্ত্রীকে যেভাবে হত্যা করলেন

কুমিল্লার আর্দশ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের অলিপুর এলাকায় গৃহবধু ফারজানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বামী মো. ইকবালকে আটক করেছে র‌্যাব। আটককৃত ইকবাল জেলার আদর্শ সদর উপজেলার অলিপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে।

মঙ্গলবার সকালে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর মোহাম্মাদ সাকিব হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ২৪ এপ্রিল আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের মস্তফাপুর (কাছার) এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গৃহবধূ মোসা. ফারজানা বেগমের হাত মুখ বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গৃহবধূর বাবা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলার আসামিদের ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল মাঠে নামে। সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাতে মামলার প্রধান আসামিকে আটক করে র‌্যাব-১১। এছাড়া একইদিন মামলার ২, ৩ ও ৬ নম্বর আসামিকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্থান্তর করে র‌্যাব।

মেজর সাকিব আরো জানান, ইকবাল পেশায় একজন অটোচালক, বিভিন্ন গাড়ির ব্যাটারি এবং গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের চুরিরসহ তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি তার স্ত্রী ফারজানাকে নিয়ে কুমিল্লা শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

২০১০ সালের একটি চুরির ঘটনার দুইমাস আগে ওয়ারেন্ট জারি হওয়া মামলায় জামিনে বের হওয়ার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ৫ হাজার টাকা জমিয়ে স্ত্রী ফারজানার কাছে রেখে যান, এবং গ্রেফতার হলে জামিনে বের করার জন্য স্ত্রীকে বলে যান। কিছুদিন পর ইকবালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে স্বামী জেলে থাকায় ভাড়া বাসায় শিশু সন্তানকে নিয়ে কষ্ট থাকায় ইকবালের রেখে যাওয়া ৫ হাজার টাকা দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে ভাড়া বাসার সব মালামাল নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় ফারজানা। পরে জেলখানাতে গিয়ে ফারজানা তার স্বামী ইকবালকে ভাড়া বাসা ছেড়ে তার বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার ঘটনাটি বলতেই ইকবাল স্ত্রী ফারজানার উপর চড়াও হয়, এবং ইকবালকে দ্রুত জামিনের ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দিয়ে চলে আসে।

ইকবালের স্ত্রী তাকে জামিনে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও জামিনে বের করার ব্যাপারে কোনো তৎপরতা না থাকায় স্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীতে চলিত মাসের প্রথম সপ্তাহে জেল থেকে জামিন পেয়ে তার বোন কলির কাছে যায় এবং বোনের কাছে রেখে যাওয়া মোবাইল ফোন নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যায়। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পরে স্ত্রী কেন তাকে জামিন না করিয়ে বাসার মালামাল নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে আসছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

ফারজানা স্পষ্ট জানান, জুয়াড়ি ও চোরের সঙ্গে সংসার করবে না। এ নিয়ে ইকবালের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। ঝগড়ার জের ধরে ইকবাল শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসে। পরে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে ইকবাল। ফারজানার কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায় এবং তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট করতে থাকে।

গত ২৩ এপ্রিল স্ত্রী ফারজানাকে ফোন করে ইকবাল বলে সে জেলে যাওয়ার আগে তার বোন কলির কাছে তিন হাজার টাকা রেখে গিয়েছিল, যা কলি তাকে না দিয়ে ফারজানার কাছে দিতে চায়। ইকবাল ঐ টাকা নিয়ে তার একমাত্র শিশু সন্তান ফারহানা আক্তার ইভাকে ঈদের শপিং করে দেবে বলে, এতে ফারজানা আসতে রাজি হয়।

পরবর্তীতে ইকবাল ফারজানাকে আনতে শ্বশুরবাড়ি আলেখারচরে যায় এবং ফারজানাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে আসার সময় জনশূন্য অপর রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসতে থাকে। হঠাৎ পেছন থেকে ফারজানার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে ইকবাল। পরদিন ২৪ এপ্রিল বিষয়টি জানাজানি হলে ইকবাল রাজধানী ঢাকায় আত্মগাপেনে চলে যায়। পরে র‌্যাবের একটি দল ঢাকা সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ইকবালকে আটক করে।

আরো পড়ুন