কুমিল্লা কালেক্টরেট কার্যালয় কর্মচারীদের কর্মবিরতি

বেশ কয়েক দফায় সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লা কালেক্টরেট কার্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মচারীরা তাদের বিভিন্ন দাবী আদায়ের লক্ষে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। চলমান আন্দোলনে সহকর্মীদের সাথে গত তিনদিন ধরে কুমিল্লা কালেক্টরেটের উচ্চমান সহকারী আবদুল হাকিম আন্দোলন করছেন। তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় জানান, তার চাকুরী মাত্র আর ১ দিন আছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর চাকুরী করে উচ্চমান সহকারী হয়েছেন ২বছর হয়। এত আর্থিক কোন প্রকার সুবিধা তিনি পাননি। একটি ভাল পদ নিয়ে অবসরে যাবেন দীর্ঘ আশা ছিল এ কর্মচারীর। কিন্তু আজই তার শেষ অফিস, তবুও ছোট ভাইদের কিছু একটা হবে এই আশায় সহকর্মীদের কর্মসূচিতে যোগ দেন আবদুল হাকিম নামের এই উচ্চমান সহকারী।

এভাবে আরো অনেক কর্মচারী রয়েছেন যাদের চাকুরী কারো ছয় মাস কারো ১ বছর রয়েছে। যারা একই পদে থেকে অবসরে যাবেন। মাঠ প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মচারী অফিস সহকারী থেকে পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন না। অফিস সহকারী হিসেবেই চাকুরি জীবন শেষ করতে হচ্ছে তাদের। কর্মচারীরা জানান, পদোন্নতি ছাড়াই একই পদে কাজ করছেন মাঠ প্রশাসনের এমন হাজার হাজার কর্মচারী। এ কষ্ট নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন। এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে দুই দশক ধরে নানাভাবে আন্দোলন করছেন তারা।

পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসনে প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা র্প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন একাধিকবার। নীতিনির্ধারকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বহুবছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদোন্নতির নির্দেশনা দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করেনি। যার দরুন মাঠ প্রশাসনে নে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণির সরকারী কর্মচারীরা পদবি ও বেতন গ্রেড উন্নীত করণের দাবিতে কর্মবিরতিতে রয়েছে। বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) ব্যানারে এ কর্মসূচি করছেন তারা।

এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার থেকে টানা তিন দিনের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন তারা। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোন ধরনের কাজে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে সকল প্রকার কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কর্মবিরতি পালনকালে কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন কর্মচারীরা। এ দাবিতে কর্মচারীরা গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত আন্দোলন করেছেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে টানা কর্মবিরতি, অফিস চত্বরে অবস্থান ও সভা-সমাবেশ করেছেন নিজ নিজ কার্যালয়ে। দিনে দুথ-তিন-চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন। সর্বশেষ ২৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় ফের আন্দোলন করছেন তারা। এ পর্যায়ে তিনদিন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। আগামী ২৭ মাচের্র মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২৮ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহাসমাবেশের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বাকাসস কেন্দ্রীয় কমিটি। আন্দোলনকারীরা জানান দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেয়ার পরও দাবি না মানা রহস্যজনক। আমাদের সাথে অনেকেই একই পদে থেকে অবসরে গিয়েছে এবং কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন। এমনিভাবে অনেক কর্মচারী কুমিল্লা কালেক্টরেটের অধীনে দীর্ঘ ৩৪-৩৫ বছর চাকরী করেও কোন পদোন্নতি পাননি। জানা যায়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরাও পদবি পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেছেন। কর্মচারীরা জানান, একই পদের ২১ ধরনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীর পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯৫ সালের ১৯ মে সচিবালয়ের প্রায় দুই হাজার তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মর্কতা পদে উন্নীত করা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যে পদে চাকরিতে ঢুকছে, সে পদ নিয়েই অবসরে যেতে হচ্ছে। এর চাইতে লজ্জার আর কি থাকতে পারে। সব বিভাগের কর্মচারীদের পদোন্নতি হয়, আমাদের হয় না।

এ বঞ্চনা থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের উদ্ধার করতে হবে। অন্যথায় মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা আরো কঠোর আন্দোলন করবে। ৩য় দিনের কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা জেলা শাখার সহসভাপতি সুলতান মো: নাছির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো: আরিফুর রহমান, সহসভাপতি আবদুল মমিন, এনামুল হক, হাবিবুর রহমান, আবু বক্বর ছিদ্দিক হেলাল, যুগ্ন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ইমাম উদ্দিন ইউসুফ, মাইনুদ্দিন, আমান উল্লাহ, কাউছার আহমে, মনির হোসেনসহ প্রমুখ । জানা যায় বুধবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: আবুল ফজল মীর কর্মচারীদের দাবী দাওয়ার বিষয়ে যৌক্তিকতা তুলে ধরে জনপ্রশাসন সচিব বরাবরে সুপারিশসহ পত্র প্রেরণ করেছেন।

আরো পড়ুন