কুমিল্লা থেকে ঢাকায় গিয়ে দুঃসাহসিক চুরি!

গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। বেশিরভাগেরই বাড়ি কুমিল্লায়। তারা মাঝে মধ্যেই ঢাকায় এসে ওঠেন যাত্রাবাড়ীর একটি আবাসিক হোটেলে। দুই-তিন দিন অবস্থান করে ফিরে যান কুমিল্লায়। ঢাকায় তাদের কাজ হলো চুরি করা। দুঃসাহসিক সব চুরি করে বেড়াতো তারা। তাদের টার্গেট ছিল শপিংমল বা বিভিন্ন দোকান। এসব প্রতিষ্ঠানের তালা কেটে চুরি করতো তারা। এমন একটি গ্রুপের দলনেতাসহ দুই জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিম। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো আকাশ হোসেন রুবেল ওরফে আঙুল কাটা রুবেল ও সফর ওরফে সুমন। বুধবার (১২ আগস্ট) যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘এই চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তারা চোরাই মালগুলো যাদের কাছে বিক্রি করে তাদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। সেগুলোও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত ২৩ জুলাই রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার মোতালেব প্লাজার পঞ্চম তলায় স্যামসাং ও ভিভোর দুটি শো-রুম থেকে তালা কেটে ৯৫টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় চোরেরা। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পায় দোকান বন্ধ করে যাওয়ার পরপরই ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক দল তরুণ অভিনব কায়দায় দোকানের তালা ভেঙে ভেতর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যায়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ওই চোর চক্রের এক সদস্যকে প্রথমে শনাক্ত করে। বুধবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে গ্রেফতার করা হয় তার আরও এক সহযোগীকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দু’জন মোতালেব প্লাজায় চুরির কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে একে একে বলতে থাকে তাদের চুরি করার অভিনব পদ্ধতি ও কৌশলের কথা। গ্রেফতার রুবেল ও সুমন জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর ও হোমনায়। তাদের চক্রের বাকি সদস্যদেরও বাড়ি একই এলাকায়। তারা কয়েকদিন পরপরই ঢাকায় এসে যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি হোটেলে উঠতো। এরপর একাধিক দলে ভাগ হয়ে প্রথম দিন তারা বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানপাটগুলো রেকি করতো। টার্গেট ফিক্সড করে দ্বিতীয় দিনে নেমে পড়তো চুরির কাজে। চুরি করতেও একাধিক দলে ভাগ হয়ে লোকজন পাহাড়া দেওয়া, তালা কাটা, ভেতরে প্রবেশ করে জিনিসপত্র বের করতো। যে কোনও দোকানে চুরি করতে তারা সময় নিত মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এর মধ্যে চুরি করা জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিতো। পরদিনই সবাই চলে যেতো কুমিল্লায়।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, তারা চোরাই মালগুলো নিয়ে বিক্রি করতো চট্টগ্রামে। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের শনাক্ত করতে না পারে। চোরাই মাল বিক্রির পর টাকা ভাগাভাগি করে নিতো তারা। দলের কেউ পুলিশে ধরা পড়লে অন্যরা আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে দ্রুত জামিনে বের করার চেষ্টা করতো। এই গ্রুপটি গত কয়েক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক দোকানে চুরি করেছে। গ্রেফতার হওয়া রুবেল রাজধানীতে একটি স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলো। জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও আগের পেশায় ফিরে গেছে।

ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, এই চোর চক্রের সদস্যরা সাধারণত মার্কেটে বেশি চুরি করে। মার্কেটের দোকান বন্ধ হওয়ার পরপরই চুরির কাজে নেমে যায় তারা। দোকানের তালা কাটার আগে তারা কোনও ব্যানার বা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিতো। মোতালেব প্লাজায় চুরি করতে তারা ছাতা ও দোকানের বিজ্ঞাপনের ফেস্টুন ব্যবহার করেছে। তালা কেটে ভেতরে প্রবেশের পর এমন ভাব করতো যে তারাই দোকান বন্ধ করছে।

ডিবির ওই কর্মকর্তা জানান, চুরি করার সময় কেউ ধরা পড়লে তাদের অপর সদস্যরা কৌশলে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করতো। পুরো চোর চক্রের সদস্যদের সবাই বয়সে তরুণ। পোশাকেও কেতাদুরস্ত ভাব নিয়ে চলাফেরা করে তারা। যাতে প্রথম দেখায় তাদের কেউ চোর বলে সন্দেহ না করে।

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

আরো পড়ুন