কুমিল্লা দেবিদ্বারে শশুর বাড়িতে জামাতার রহস্যজনক মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ১২নং ভাণী ইউনিয়নের ভানী গ্রামে (মধ্যপাড়া) শশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে জামাতার রহস্যজনক মৃত্যু’র সংবাদ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৯অক্টোবর) দিবাগত রাতে দেবীদ্বার উপজেলার ১২ নং ভানী ইউনিয়নের ভানী গ্রামের মধ্যেপাড়ার মৃত: সিরাজ মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে।

মৃত: আনোয়ার হোসেন (৩৫) চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। সে পেশায় বাস চালক। আনোয়ার দেবীদ্বার উপজেলার ভানী গ্রামের (মধ্যেপাড়া) মৃত: নুরুল ইসলামের মেয়ে সোনিয়া বেগম(২৩)কে প্রায় ৬মাস পূর্বে বিয়ে করেন। ঘটনার পর থেকে মেয়ের পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। পুলিশ নিহত আনোয়ারের স্ত্রী সোনিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন।
সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত আনোয়ার হোসেন’র মরদেহ উদ্ধার পূর্বক থানায় নিয়ে আসেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৬মাস পূর্বে তাদের বিয়ে হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনোয়ার হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে শ্বশুর বাড়িতে আসে। পারিবারিক বিষয় নিয়ে আনোয়ারের সাথে তার শ্বশুর বাড়ির লোকদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আনোয়ারকে বেধরক মারধর করে। সকালে তার মরদেহ সড়কে দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন।

ভাণী গ্রামের ব্যবসায়ি আব্দুল জলিল জানান, নিহত আনোয়ারের স্ত্রী সোনিয়া বেগমের পূর্বে আরো একটি বিয়ে হয়েছিল, পরবর্তীতে আনোয়ারের সাথে বিয়ে হওয়ার পর আনোয়ারকে তার স্ত্রী পছন্দ করতনা। কারন সোনিয়া তার এলাকার আরো এক যুবকের সাথে পরকীয়া চলছিল। তাই সে তার শ্বশুর বাড়িতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারন তার একদিন পূর্বে আনোয়ারের বাবা আমির হোসেন তার পুত্র বধূকে নিয়ে যেতে ভাণী আসলেও সোনিয়া তার শ্বশুরের সাথে স্বামীর বাড়ি যায়নি। তাছাড়া সোনিয়ার পিতা-মাতা সহ পরিবারের সবাই আন্ত:জেলা মাদক বিক্রেতা।

একই কথা জানালেন ভাণী গ্রামের মোঃ কামরুল হাসান। ভাণী গ্রামের মধ্যপাড়া মৃত: সিরাজুল ইসলাম’র বাড়ির অধিকাংশ লোক আন্তঃজেলা মাদক বিক্রেতা বলেও তিনি জানান। মাদক বিক্রয় নিয়েও আনোয়ারের সাথে তার শ্বশুর বাড়ির লোকদের বিরোধ ছিল।

চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, নিহত আনোয়ার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। রাতে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আনোয়ারকে মারধর করে, পরে সমঝোতার আসে। রাতে খাবার শেষে ঘুমাতে গেলে রাত দেড়টায় অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। পরে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর তার মুখে বিষের গন্ধ পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে তার খাবারের সাথে বিষ মেশানো ছিল। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। রাতে ঢাকা যাওয়ার পথে গৌরীপুর এলাকায় তার মৃত্যু হয়।

মৃত: আনোয়ারের চাচাতো ভাই নুরুল হক জানান, আনোয়ারের শ্বাশুরী তাকে ফোনে ডেকে নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করে, অচেতন অবস্থায় তার মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে প্রচার করে। তাকে প্রথমে চান্দিনা হাসপাতালে পরে ঢামেক হাসপাতালে নেয়ার পথে গৌরীপুর এলাকায় মারা গেছেন। তিনি আরো জানান, নিহতের গলা, হাত সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আচর ও ফুলা জখমের দাগ ছিল। নিহতের চাচা কবির হোসেন বলেন, আমার ভাতিজাকে ডেকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা করেছে।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ জহিরুল আনোয়ার বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।

আরো পড়ুন