কুমিল্লা দেবিদ্বার থেকে অপহরণ লামায় খুন

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে মো. অলিউল্লাহ স্বাধীন (১৭) নামে এক কিশোরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা শিংঝিরি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বাধীনের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায়। এ ঘটনায় পুলিশ তার ফুফাতো ভাইসহ দু’জনকে আটক করেছে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত ২২ মার্চ কুমিল্লার বাড়ি থেকে লামায় নিয়ে যাওয়া হয় স্বাধীনকে। এরপর তাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ না পেয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্বাধীন দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে। কোরআনে হাফেজ স্বাধীন মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। এ হত্যার ঘটনায় আটক দু’জন হলো- কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের খাড়াতাইয়া গ্রামের মৃত মালেকে ছেলে ফয়েজ আহমেদ ও দেবিদ্বারের বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মদন খাঁর ছেলে আরিফুল ইসলাম। এদের মধ্যে আরিফুল নিহত স্বাধীনের ফুফাতো ভাই।

নিহতের বাবা মোবারক হোসেন জানান, স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হাফেজ হওয়ার পর বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছিল স্বাধীন। করোনাকালে মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় তাকে ভালো চাকরির দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২২ মার্চ বাড়ি থেকে নিয়ে যায় আরিফুল ও ফয়েজ। এরপর বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় ফয়েজের শ্বশুরবাড়ি বান্দরবানের লামা উপজেলার বেতঝিরি গ্রামের মোহাম্মদ হাকিম উল্লাহর বাড়িতে। সেখানে স্বাধীনকে জিম্মি করে ২৫ মার্চ দুপুরে তার বড় ভাই মনিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা কীভাবে কোথায় দিতে হবে জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেওয়া হয়।

এদিকে এ ঘটনায় ২৮ মার্চ বুড়িচং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বাধীনের আরেক ভাই জিলানী বাবু। ওই জিডির সূত্র ধরে মনিরের নম্বরে কল আসা দুটি মোবাইল ফোন নম্বর ট্র্যাক করে মঙ্গলবার লামা উপজেলার বেতঝিরি এলাকা থেকে আরিফুল ও ফয়েজকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যে ওই রাতেই শিংঝিরি এলাকা থেকে স্বাধীনের মাটিচাপা দেওয়া লাশ উদ্ধার করা হয়।

লামা থানার এসআই ত্রিজিত বড়ূয়া জানান, স্বাধীন নিখোঁজ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় তার ভাই জিলানী বাবু ২৮ মার্চ বুড়িচং থানায় জিডি করেন। মুক্তিপণ দাবি করা মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে অবস্থান জানার পর জিলানী বাবু লামা থানায় আরও একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে লামা থানা পুলিশ তদন্তে নামে।

ত্রিজিত বড়ূয়া আরও জানান, তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফয়েজ ও আরিফুলকে আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তিতে স্বাধীনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় বুড়িচং থানার এসআই বিনোদ বাবুসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সহযোগিতা করেন। মুক্তিপণ না পেয়ে স্বাধীনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে আটক দু’জন জানিয়েছে।

লামা থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, আরিফুল ও ফয়েজের দেওয়া তথ্যে মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে ওই কিশোরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে স্বাধীন নিহতের ঘটনায় দেবিদ্বারের বিষ্ণুপুরে তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার অসুস্থ মা লুৎফা বেগম বিছানায় মাতম করছেন। নিহতের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, হাফেজ হওয়ার পর এলাকার অনেকেই বলেছিল স্বাধীনই তাদের সংসারে সুদিন আর সুনাম নিয়ে আসবে। আরিফের কথায় ভালো চাকরির আশায় বাড়ি থেকে বের হয়ে আমার ছেলে তাদের হাতে জীবন দিল।

আরো পড়ুন