কুমিল্লা বোর্ডে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক !

ডেস্ক রিপোর্টঃ এইচএসসি এবং এসএসসির পর এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে সোয়া লাখ পরীক্ষার্থী ফেল করায় দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের পাসের হারের দিক থেকে তলানিতে রয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

এ বছর জেএসসিতে সারা দেশে গড় পাসের হার ৮৩.৬৫ শতাংশ হলেও কুমিল্লা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬২.৮৩ শতাংশ।

এ বছর ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৫৩ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৬ জন এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ জন। এছাড়া এ বছর মাত্র ৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর শতভাগ পাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ৩৪৮টি। এদিকে এ বোর্ডের পরীক্ষার ধারাবাহিক ফলাফল বিপর্যয় ঘটায় অভিভাবক, পরীক্ষার্থী ও সচেতন মহল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বোর্ডের গত ৫ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৬ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী। ২০১৪ সালে পাসের হার ৯৩.৭৫ ও জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৭ হাজার ২৬৪ জন, ২০১৫ সালে পাসের হার ৯২.৫১ ও জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২০ হাজার ৭৪৭ জন এবং ২০১৬ সালে পাসের হার ৮৯.৬৮ ও জিপিএ-৫ লাভ করে ১৯ হাজার ১৮৬ জন। ৫ বছরের এ ফলাফলের মধ্যে এ বছর সর্বনিম্ন ফলাফল হয়েছে। এছাড়া ৫ বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ৩০.৯২ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ কমেছে ১১ হাজার ৮৭২। এ বোর্ডে শুধু পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেনি, কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। এ বছর শতভাগ পাস করেছে মাত্র ৬১টি প্রতিষ্ঠান। এর আগে ২০১৩ সালে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩১৪টি, ২০১৪ সালে ৫২৭টি, ২০১৫ সালে ৪৪৫টি ও ২০১৬ সালে ৩৪৮টি।

গত কয়েক বছর ধরে এসএসসি, এইচএসসি এবং এ বছর জেএসসিতে ফলাফলের ধারাবাহিক এমন বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও সুশীল সমাজের লোকজন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, দেশের সব বোর্ডের তুলনায় কুমিল্লা বোর্ড পর্যায়ক্রমে নিম্নমুখি ফলাফল করে আসছে। এতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এ বোর্ডের গত এইচএসসি’র ফলাফল প্রকাশের দিন কুমিল্লা বোর্ডের এমন ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চান এবং কারণ খুঁজে তা উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। কিন্তু এবার জেএসসি’র ফলাফলেও সবার মাঝে আরও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বোর্ডের ধারাবাহিক এমন ফলাফলের কারণে অন্য বোর্ডের তুলনায় কুমিল্লা বোর্ডের অধিভুক্ত ৬ জেলার শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ও পরীক্ষক জানান, শিক্ষার মানোন্নয়নে বোর্ড কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন তৎপরতা নেই, কিন্তু খাতা মূল্যায়নে অলিখিত কিছু নির্দেশনার কারণে ফলাফলের এমন বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে।

এদিকে এবার জেএসসির ফলাফলের এমন বিপর্যয়ের জন্য অভিভাবক ও সুশীল সমাজের নেতারা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে দূষছেন। অনেকে সরাসরি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দায়ী করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমিল্লা নগরীর একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, সব রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রায় এক যুগ ধরে এ বোর্ডে কুমিল্লা সদর উপজেলার বাসিন্দা কায়সার আহমেদ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদে আছেন। পরীক্ষার ফলাফল ও শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই, কিন্তু পরীক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ নানা কারণে তাকে নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। জেএসসির এমন ফলাফলের বিষয়ে জানার জন্য তার কার্যালয়ে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ফলাফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান, সারা দেশের মেধাবীদের তুলনায় কুমিল্লা কখনোই পিছিয়ে ছিল না, কিন্তু এখন বোর্ড দাবি করছে প্রকৃত মেধাবীরাই পরীক্ষায় পাস করছে। বোর্ডের এমন বক্তব্য অযৌক্তিক বলে দাবি করে তিনি আরও জানান, এমন ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে বোর্ড কর্তৃপক্ষের দক্ষতা এবং মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা দায়ী। শিক্ষকরাও এর দায় এড়াতে পারেন না। বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কুমিল্লাকে মেধাশূন্য করার এ ধারাবাহিক এ প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তবে বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহাদুর হোসেন জানান, ‘এবার জেএসসিতে মফস্বল এলাকার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইংরেজিতে ফেল করেছে ৭৬ হাজার ৬৮১ জন এবং গণিত বিষয়ে ফেল করেছে ৪৫ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী। এ কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমে গেছে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

সূত্রঃ দৈনিক সংবাদ

আরো পড়ুন