কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা, দেড় বছরে বাণিজ্য ১২ লাখ

কুমিল্লা সদরে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের টিকিট বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি আইন অনুযায়ী বহির্বিভাগের টিকিটের মূল্য পাঁচ টাকা হলেও প্রতি রোগী থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে হাসপাতালের দালাল ও স্টাফদের হাতে অপমান এবং লাঞ্ছিত হতে হয় রোগীদের। গত দেড় বছরে হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট বাবদ বাণিজ্য হয়েছে ১১ লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ টাকা।

রোগীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৩ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদক হাজির হন কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে। লাইনে দাঁড়িয়ে ৯টা ৪৫ মিনিটে কাউন্টার থেকে নিজের নামে টিকিট সংগ্রহ করেন। টিকিটের মূল্য দিতে হয় ১০ টাকা। কেন ১০টা রাখা হলো জিজ্ঞেস করাতে কর্তব্যরত স্টাফ হৃদয় জানান, এটি সরকার নির্ধারিত। বারবার জিজ্ঞাসা করলেও তিনি একই উত্তর দেন।

সূত্র মতে, সরকারি এই হাসপাতালে ২০২০ সালে বহির্বিভাগে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখান এক লাখ ৮৬ হাজার ২৭ জন রোগী। আর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে টিকিট সংগ্রহ করেন ৮ হাজার ৩১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৩ হাজার ১০০ জন, মার্চ মাসে ১৭ হাজার ৯৯২ জন এবং এপ্রিল মাসে ১১ জাহার ৩৩১ জন। সবমিলিয়ে গত দেড় বছরে বহির্বিভাগ থেকে টিকিট সংগ্রহ করা হয়েছে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৪৮১ জন রোগী। সে হিসাবে প্রতি রোগী থেকে অতিরিক্ত পাঁচ টাকা হারে ১১ লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ টাকার আদায় করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, উদ্বৃত্ত টাকার একটি অংশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এম এ করিম খন্দকারকে ভাগ দিতে হয়। তার ইশারা-ইঙ্গিতে প্রতিদিন রোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এম এ করিম খন্দকার বলেন, ‘বহির্বিভাগের সরকারি টিকিটের মূল্য পাঁচ টাকা। এর বাইরে বেশি নেয়ার সুযোগ নেই। খবর নিয়ে দেখছি কেন বেশি রাখা হয়েছে।’

অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আনীত অভিযোগ সত্য নয়। এক পর্যায়ে তিনি এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এদিকে, জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগেও টিকিট নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি আইন অনুযায়ী ওই হাসপাতালে বহির্বিভাগের টিকিটের মূল্য তিন টাকা রাখার কথা থাকলেও সে ক্ষেত্রে রোগী প্রতি থেকে আদায় করা হচ্ছে পাঁচ টাকা।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসিবুর রহমান বলেন, ‘ভাঙতি টাকার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে ধরনা দিয়েও টাকা পাচ্ছি না। ফলে রোগীদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।’

উদ্বৃত্ত টাকা কার পকেটে যাচ্ছে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে অস্থায়ীভাবে একজন আয়া ও একজন অফিস স্টাফ নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের মাসে ১০ হাজার টাকা করে দুইজনকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, প্রতিদিন গড়ে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০০-৬০০ রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। সে হিসাবে প্রতি রোগী থেকে অতিরিক্ত দুই টাকা হারে মাসে ৩৬ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে আদায় করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, উদ্বৃত্ত টাকার একটি অংশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসিবুর রহমানকে ভাগ দিতে হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে ব্যয় করা হয়।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, খবর নিয়ে দেখছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সূত্রঃ জাগোনিউজ

আরো পড়ুন