কুমিল্লা সিটি নির্বাচন নিয়ে যত সমীকরণ

আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। সোমবার (২৫ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশন সভায় তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। এটি হবে সিটির জন্য তৃতীয় বারের নির্বাচন। এবার ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন।

এদিকে, কুসিক নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শুরু হয়েছে নানা সমীকরণ। এই নির্বাচন বেশ কিছু কারণে গুরুত্ব বহন করছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হতে যাচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম নির্বাচন। এদিক বিবেচনায় এই নির্বাচন নতুন কমিশনারের ‘আত্ম পরিচয়ের’ পরীক্ষা বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।

২০১১ সালের ১০ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এটি কুসিকের তৃতীয় নির্বাচন। গত দুই নির্বাচনে একজন ব্যক্তিকেই (মনিরুল হক সাক্কু) মেয়র করেছে নগর বাসী। সাক্কু গত দুই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন। এ বছর বিএনপি প্রার্থী না দিলে বিএনপি শূন্য হতে যাচ্ছে এই নগরটি। তবে মেয়র মনিরুল হক স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, দল নির্বাচনে আসলে আমি মনোয়ন চাইবো। যদি না আসে আমার সহকর্মীদের সাথে বুঝে সিদ্ধান্ত নিবো।

কে হতে যাচ্ছেন কুমিল্লার নগর পিতা?

এখন পর্যন্ত ডজন খানেক ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে কুসিক নির্বাচনের প্রার্থীতার। মেয়র সাক্কুকে বাদ দিলে তাদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী। এদের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আরফানুল হক রিফাত, ভিক্টোরিয়া কলেজ সাবেক ভিপি নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম শিকদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু, কুমিল্লা চেম্বারের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, সাবেক জিএস ফারুক আহমেদ ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন।

সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও মহানগর আওয়ামী লীগরে সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত আছি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত জানান, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আমাকে একক প্রার্থী হিসেবে মনোনিত করেছে। আশা করি মমতাময়ী নেত্রী আমাকে মূল্যয়ন করবেন।’

বিগত দিনের ত্যাগের রাজনীতির মূল্যায়ন প্রত্যাশা করছেন অন্যান্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও।

এদিকে বিএনপি প্যানেল থেকে বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি সদস্য কাউছার জামান বাপ্পী নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন, এছাড়া আছেন সাবেক ছাত্রনেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার।

ইসলামী আন্দোলন থেকে নির্বাচনী প্রার্থীতা করতে পারেন মহানগর সভাপতি এম এম বিলাল হোসাইন

হতে পারে চর্তুমুখী লড়াই!

কুমিল্লা নগরে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হতে পারে চর্তুমুখী লড়াই। সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহার ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা পরিবারের আধিপত্যের লড়াই নগরে দীর্ঘ দিনের। নির্বাচনে দুই পক্ষই চাইবে নগরকে হাতের মুঠে রাখতে। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, দলীয় প্রতীক নিজ সমর্থিত প্রার্থীর দখলে রাখতে কেন্দ্র মুখী এখন দুই পক্ষ। নির্বাচনে মহানগর সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাতের জন্য সদর আসনের সাংসদ প্রতীক চাইবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এদিকে সীমা ও ইমরান খান দুই ভাই বোনের যে কোনো একজন চাইতে পারেন নৌকা।

অপর দিকে সাক্কু ও সাবেক সাংসদ হাজী ইয়াসিনের দ্বন্দ্ব যেন ওপেন সেক্রিট। মনিরুল হক সাক্কু নিজে প্রার্থী হলেও, বিএনপি ঘরোয়া প্রার্থী কাউছার জামান বাপ্পীকে মাঠে রাখতে চাইবেন বিএনপি সাবেক সাংসদ হাজী ইয়াসিন। সব ঠিক থাকলে কুসিক নির্বাচনে চর্তুমুখী লড়াই হতে পারে।

সাক্কুর হ্যাটট্রিক!

ভোটের লড়াইয়ে এ যেন ক্রিকেট মাঠের হিসেব। এ বছর জয় পেলে কুমিল্লার নগর পিতা হিসেবে হ্যাটট্রিক করবেন মেয়র সাক্কু। বেশকিছু বিষয়ে সমালোচনা থাকলেও ভোটের মাঠে এখনো তিনি জনপ্রিয়। সুষ্ঠ ভোট হলে সাক্কু আবারও নির্বাচিত হবেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা।

প্রসঙ্গত, ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সিটি । ২০১১ সালে প্রথম ও ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় কুসিকের।

আরো পড়ুন