কুমিল্লা সিটি যেন যানজটের নগরী

২০১১ সালে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর ৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। এ সিটিতে সাড়ে চার লক্ষাধিক বাসিন্দার বসবাসের হিসাব থাকলেও বাস্তবে দ্বিগুণ মানুষ বাস করে। এত বিশাল জনসংখ্যার এই নগরী ধুঁকছে যানজটে। নগরীর প্রতিটি প্রধান সড়কে নগরীবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তি যানজট। শুধু নগরীর প্রধান প্রধান সড়কই নয়, অলিগলিতেও রয়েছে একইচিত্র।

জেলা ট্রাফিক পুলিশ বলছে, নগরের ২৭টি এলাকায় তীব্র যানজট হয়। এর মধ্যে ১২টি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ আছে। বাকি ১৫টি এলাকায় পুলিশ থাকে না। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, জনবলের অভাবে ও যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়, পুলিশ লাইন, চকবাজার, শাসনগাছা, টমছমব্রিজসহ সব সড়কেই রয়েছে যানজট। অপ্রশস্ত সড়ক, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অনুমোদনহীন চার ও তিন চাকার স্টপিজ, সিএনজি চালিত অটোরিকশার লাগামহীন যাতায়াতে অসহনীয় যানজট এখানকার রোজকার ঘটনা। ঝাউতলা হতে শুরু করে কান্দিরপাড় পর্যন্ত, কান্দিরপাড় হতে সালাহউদ্দিন মোড় পর্যন্ত সড়কের বিশাল অংশ জুড়ে পার্কিং করে রাখা অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য গাড়ি যানজটের অন্যতম কারণ। নগরীর প্রতিটি সড়কে রয়েছে অস্থায়ী দোকান। এ সব দোকানের কারণেও সড়ক সরু হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানবাহনের অব্যবস্থাপনার কারণে নগরীর অন্যতম দুই প্রবেশমুখ শাসনগাছা ও টমছমব্রিজে সব সময় যানজট লেগে থাকে।

প্রতিদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজসহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মেডিকেল কলেজ, বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেম কোম্পানি লিমিটেড, বার্ড, কুমিল্লা বেতারছাড়াও আরও অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক বাস নগরীতে প্রবেশ করে। এ সব থেকে যত্রতত্র শিক্ষার্থী বা অফিসার কর্মচারীদের উঠা-নামা করানোর কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

যানজটে ভোগান্তির শিকার ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী জামাল হোসেন জানান, সিটি কর্পোরেশন হলেও শহরের সব সড়ক প্রয়োজনের তুলনায় সরু। যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে থাকা রাখা হয়। যার ফলে যানজট লেগে থাকে। আর ভোগান্তি পোহাতে হয়।

নগরীর শাসনগাছা এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন হওয়া উচিত কুমিল্লায় সেমন নেই। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। যানজটের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে বিলম্ব হয়।

যানজট নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমরা সড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছি। সিটি কর্পোরেশন হতে সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করছি।’

ট্রাফিক পুলিশের সংকটে বিষয় কুমিল্লায় পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ‘মাত্র সার্জেন্ট সাতজন দিয়ে পুরো জেলা কাভার করা সম্ভব হচ্ছে না। কুমিল্লা ট্রাফিকের জন্য ২০০ থেকে ২৫০ জন দরকার। সেই লক্ষ্যে প্রস্তাব পাঠাবো। কিছু জায়গায় যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক বিভাগ শৃঙ্খলা এনেছে। বাকিগুলো আশা করে হয়ে যাবে।’

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, ‘বিগত মেয়র সাহেব অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট তৈরি করায় যানজট নিরসনে সমস্যা হচ্ছে। তবে এক বছর সময় চেয়েছি, আশা করি যানজট কমবে।’

আরো পড়ুন