কেন কুমিল্লা নামেই বিভাগ হওয়া উচিত

আল আজাদঃ আপনি যদি আমাকে ঢাকার কথা বলেন, তাহলে আমাকে বুঝতে হবে ঢাকা মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ভাষার দাবিতে রক্তে রঞ্জিত সেই রাজপথ, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দান, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের দুর্গ, পুরান ঢাকার বাকরখানি ও বিরিয়ানী ইত্যাদি। ঢাকা নামের সাথে এই সবকিছুর একটা সম্পর্ক আছে, ঐতিহাসিক সম্পর্ক। এখন যদি হুট করে ঢাকা নামটি পরিবর্তন করে দেন, তাহলে কী হবে! এককথায় ঢাকা তার ঐতিহ্য হারাবে, এতদিনের পরিচিতিগুলো নিমিষেই ফিকে হয়ে যাবে।

ঠিক তদ্রুপ, কুমিল্লা নামটি কয়েক বছর আগের দেয়া নাম নয়। কুমিল্লা নামের ঐতিহ্য আছে। কারণ, রসমালাই বললে আপনি বুঝেন দেশ-বিদেশখ্যাত কুমিল্লার রসমালাই, খাদি বললেও কুমিল্লার খাদি, শীতলপাটিতে খ্যাত কুমিল্লা। সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র বাড়ি কুমিল্লায়, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মেজর আবদুল গণি ছিলেন কুমিল্লার মানুষ। নারী জাগরণের অগ্রদূত হয়েও যিনি আড়াল হয়ে আছেন, যিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মের ৪৬ বছর আগে জন্মেছিলেন তিনি হলেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী। ব্রিটিশ ভারতে সর্বপ্রথম ‘নওয়াব’ উপাধি পাওয়া এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মানব সেবামূলক কাজের ক্ষেত্রে তৎকালে একমাত্র নারী নিদর্শন ছিলেন যিনি, তিনি এই কুমিল্লার মানুষ। ‘জননী সাহসিকা’ খ্যাত কবি সুফিয়া কামালও ছিলেন কুমিল্লার অধিবাসী। দেশের একমাত্র সার্ভে ইনস্টিটিউট কুমিল্লায়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (BARD) কুমিল্লায়, প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরের শহরটিও কুমিল্লা, বিভাগীয় শহর না হয়েও স্বতন্ত্র শিক্ষাবোর্ড আছে একমাত্র কুমিল্লায় ইত্যাদি।

যদি বলা হয়, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য স্থানের কথা সেটিও আমাদের কুমিল্লা। বঙ্গবন্ধুর মুখেও কুমিল্লার মানুষের কথা ছিল, তিনি তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ তে বলেছিলেন – “হাজী গিয়াসউদ্দিন নামে একজন বন্ধু ছিল আমার। তার বাড়ি কুমিল্লায়। যখন আর কোথাও টাকা জোগাড় করতে পারি নাই, তখন তার কাছে গেলে কখনও আমাকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয় নাই।” এখন, বিভাগ করার বেলায় কুমিল্লা নামকে আড়াল করা মানে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বন্ধু হাজী গিয়াসউদ্দিন সাহেবের কুমিল্লাকে আড়াল করা।

কাজেই, কুমিল্লা নামটির পরিবর্তন মানে কুমিল্লার ঐতিহ্যকে আধারে ঠেলে দেয়া। সবকিছু ছাপিয়ে প্রতিটি মানুষের একটা অঞ্চলগত আইডেন্টিটি আছে, যা প্রতিটি মানুষ ধরে রাখতে চায়। এসব কারণে অন্যান্য বিভাগের নাগরিকদের চাওয়ার সাথে মিল রেখে কুমিল্লার মানুষদেরও এই একটি চাওয়া। আর তা হচ্ছে- ‘ময়নামতি’ কিংবা ‘মেঘনা’ কিংবা ‘গোমতী’ নয়, ‘কুমিল্লা’ নামেই কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করা হোক।

আরো পড়ুন