দেবীদ্বার বিহারমন্ডল ও ছোটনা গ্রামের ২ বাড়িতে দূর্ধর্ষ ডাকাতি

কুমিল্লা দেবীদ্বারে ২ বাড়িতে দূর্ধর্ষ ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। আলমিরার চাবির জন্য এক পরিবারের গৃহকর্তা’র স্ত্রীকে পিটিয়ে পিঠ ও হাতের কব্জী থেতলে দিয়েছে ডাকাত দল। ওই পরিবারের গৃহকর্তা, ২ পুত্র ও ৩ পুত্র বধূ এবং বেড়াতে আসা ছেলের শশুর শ্বাশুরীর হাত-পা বেঁধে রেখে ডাকাতি সংঘটিত করে। ২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা থেকে আড়াইটার মধ্যে দেবীদ্বার উপজেলা ১৬নং মোহনপুর ইউনিয়নের বিহারমন্ডল ও ছোটনা গ্রামে।

স্থানীয় ভোক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত অনুমান ১টায় বিহারমন্ডল গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মৃত; মঞ্ছর আলীর পুত্র শাহআলম ড্রাইভারের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র সহ ১০/১৫জনের মুখোধারী একটি ডাকাতদল বাড়ির গেইট ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে ডাকাতি সংঘটিত করে। অপর দিকে রাত ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে ছোটনা গ্রামের খোরশেদ আলম ভূঁইয়ার বাড়িতে ১৫/২০জনের মুখোশপড়া একদল ডাকাত বাড়ির লোকদের বেঁধে রেখে মার ধরে ডাকাতি সংঘটিত করে।

বিহারমন্ডল গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক শাহাদাত হোসেন জানান, রাত অনুমান ১টার সময় শাহআলম ড্রাইভারের বাড়িতে ১০/১৫জনের একটি ডাকাতদল ডাকাতি সংঘটিত করে। এসময় বাড়ির গৃহকর্তা শাহ আলমের ছেলে এবাদুল হক(২২) দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশের সময় প্রতিরোধের চেষ্টা করায় তাকে বেধরক মারধর করে হাত-পা-মুখ বেধে রাখে। অপরদিকে গৃহকর্তা শাহ আলম ও তার স্ত্রীকে বেঁধে রেখে ডাকাতদল ঘরের আসবাব সামগ্রী তছনছ সিএনজি চালিত অটো রিক্সা বিক্রয়ের ১লক্ষ ৬৫হাজার টাকা এবং প্রায় ৬ভরি স্বর্নালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়।

মোহনপুর ইউপি সদস্য ছোটনা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিহারমন্ডলে ডাকাতির প্রায় পৌনে একঘন্টার ব্যবধানে পাশর্^বর্তী ছোটনা গ্রামের উত্তর পাড়া খোরশেদ আলম ভূঁইয়া(৭২)’র বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র সহ ১৫/২০জন মুখোশধারী একটি ডাকাত দল বাড়ির লোকদের হাত-পা-মুখ বেঁধে ডাকাতি সংঘটিত করে।

ওই বাড়ির গৃহকর্তা খোরশেদ আলম ভূঁইয়ার পুত্র নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া(৩৫) জানান, হঠাৎ আমাদের বাড়ির নিচ তলায় বাবা মায়ের কক্ষে ৭/৮জন মুখোশ ও কালো শর্ট প্যান্ট, গেঞ্জি পরিহিত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। এসময় ডাকাত দল মায়ের উড়না ছিড়ে বাবা ও মায়ের মুখ, হাত, পা বেঁধে জিম্মি করে ঘরের আসবাব সামগ্রী তছনছ করে বাবার ৮৩ হাজার টাকা ও মায়ের রক্ষিত ১০হাজার টাকা নিয়ে নেয়। মায়ের কাছে আলমিরার চাবি ও বাকী টাকা কোথায় রেখেছে তা জানতে চাইলে মা বলেন, সবইতো নিয়ে গেছেন। এটা বলার পর রড দিয়ে পিঠে এবং হাতের কব্জীতে সজোরে আঘাত করে থেতলে দেয়।

পরে আমার কক্ষে, প্রবাসী বড় ভাই সায়িদুর রহমান ভূঁইয়ার কক্ষে এবং ছোট ভাই জাহিদের কক্ষে প্রবেশ করে একে একে কক্ষের লোকদের হাত-পা-মুখ বেঁধে প্রায় ১২ভরি স্বর্নালংকার, ছোট ভাইয়ের রক্ষিতি ৮লক্ষ টাকা এবং মানি ব্যাগে থাকা ১৫হাজার টাকা ও বাচ্চাদের গিফট পাওয়া প্লাষ্টিক ব্যাকে রাখা ২৫/৩০ হাজার টাকা সহ নগদ ৯লক্ষাধিক টাকা লুটে নেয়। এমনকি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা থেকে বেড়াতে আসা আমার ছোট ভাই জাহিদের শ্বশুর -অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য ওয়ারেন্ট অফিসার আঃ ওয়াহেদ’র একটি এন্ড্রোয়েড মোবাইল সেটটি নিয়ে যায়। ডাকাতদল আমাদের সবার মোবাইল ছিনিয়ে নিলেও যাওয়ার সময় সমস্ত মোবাইল সেটগুলো ফেরত দিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, বিহারমন্ডল গ্রাম থেকে স্থানীয়রা আমাদের ছোটনা গ্রামের এক মেম্বারকে ফোনে ডাকতি শেষে ডাকাতদল ছোটনা গ্রামের দিকে আসছন বলে জানান, ওই মেম্বার যদি স্থানীয় মসজিদের মাইকে বিষয়টি জানিয়ে দিতেন তাহলে ডাকাতদল ডাকাতি করার সুযোগ পেত না।

সংবাদ পেয়ে দেবীদ্বার ও ব্রাক্ষণপাড়া’র এ,এস,পি (সার্কেল) আমিরুল ইসলাম, দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল আনোয়ার, দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনস্থলে যান বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান।

বিকেলে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ’র সাথে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ছোটনা গ্রামে একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়, ডাকাত দলের সংখ্যা প্রায় ৭/৮জন ছিল। ৫/৬ভরি গোল্ড লুটে নেয়। লুটের টাকা সম্পর্কে জানান, ওই টাকা নিয়ে ভিন্ন মত আছে, তবে বিহারমন্ডল গ্রামের চুরির বিষয়ে তিনি অস্বিকার করেন। ডাকাতি হওয়া পরিবার এখনো মামলা করেনি। মামলা করলে আমরা মামলা নেব।

আরো পড়ুন