ধ্বংস প্রায় কুমিল্লার লালমাই পাহাড়, থামছে না পাহাড় কাটা

লালমাই পাহাড় কুমিল্লার জেলার ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এখানের ছোট বড় ১৫টি পাহাড় ঘিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাটিদস্যু চক্র। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না তাদের। এদের হাতে পাহাড় ক্ষতবিক্ষত।

এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিজস্ব ফায়দা লুটতে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি অথবা প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিগত রিসোর্ট তৈরি করছেন। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না। প্রভাবশালী মহলটি রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের মাটি।

জেলা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই পাহাড়ের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার, অংশভেদে গড় প্রস্থ প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা ৪৬ মিটার। পাহাড়কে দ্বিখণ্ডিত করে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণাংশ লালমাই ও উত্তরাংশ ময়নামতি পাহাড় নামে পরিচিত। উঁচু-নিচু দুইটি পাহাড়ে জেলার আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া ও বুড়িচং উপজেলার অংশবিশেষ রয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লাইমাই পাহাড়ের অনেক স্থানে মাটি কেটে করা হয়েছে সমতল। কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে সমতল করা জায়গায় স্থানীয়ভাবে সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে। আবার পাহাড়ের মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অধ্যাধুনিক ভেকু মেশিন। যার মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে পাহাড়ের মাটিগুলোকে কেটে ফেলা হচ্ছে।

বিগত সময়ে রেলপথ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় ক্যাম্পাস, চার লেনের মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নের প্রয়োজনে কাটা হয়েছে পাহাড়।

পাহাড়ের লালমাই, বিজয়পুর, রাজারখোলা, গলাচিপা, সালমানপুর, কোটবাড়ি, জামমুড়া, সানন্দা, রাঙ্গামুড়া, ষাইট কলোনি, বড়বাতুয়া, ভাঙ্গামুড়া, চৌধুরীখোলা, ধনমুড়া, রাণী ময়নামতি প্রাসাদের পাশে, উত্তর লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মাটি কাটার ফলে অনেক এলাকা এখন অনেকটা সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

মাটিকাটা সিন্ডিকেট এখন চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে নতুন নতুন কৌশলে পাহাড় কাটছে। মাটি কাটার পুরোনো ও নতুন ক্ষতচিহ্ন ছড়িয়ে রয়েছে পাহাড়জুড়ে।

লালমাই পাহাড়ের সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়করা এলাকার অন্তত ৫০ জন বাসিন্দা জানান, কয়েকদিন পর পর টিনের বেড়া দিয়ে দিনে-রাতে উঁচু একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা উঁচু পাহাড়ের রাস্তার পাশের অংশ কৌশলে ঠিক রেখে পেছনের অংশের মাটি কেটে সমতল করা হয়েছে।

এছাড়া কুমিল্লা নগরীর ২৪ ওয়ার্ড সালমানপুর এলাকায় ব্লু ওয়াটার পার্ক সংলগ্ন এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিন-রাতে কাটছেন লালমাই পাহাড়।

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শওকত আরা কলি বলেন, আমরা লালমাই পাহাড় কাটা ঠেকাতে নানা সময় অভিযান পরিচালনা করছি, এর ধারাবাহিকতায় অভিযান অব্যাহত থাকবে ।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ পাহাড় রক্ষার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি সব মহলকেই সচেতন হতে হবে। পাহাড় কাটার তথ্য যখনই আসে তখনই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন