পচন রোগে ক্ষতির মুখে কুমিল্লার পান চাষিরা

কুমিল্লার দেবিদ্বার, চান্দিনা, মুরাদনগর উপজেলায় পান চাষ বেড়েছে। কর্মসংস্থানও হচ্ছে স্থানীয় অনেক যুবকের। বিশেষ করে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানের বরজ। তবে নতুন করে  এ বছর শঙ্কায় ফেলেছে গাছের গোড়াপচা রোগ। এতে ধীরে ধীরে গাছ মরে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে শতাধিক চাষি।

কুমিল্লা জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, পচনসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত তারা কৃষককে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও পানচাষিরা অনেকে অভিযোগ করেন, কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা তারা পাচ্ছেন না।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নে বরকামতা, ব্রাক্ষণখাড়া, প্রেমু গ্রামের অনেক কৃষক পান চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। লাভের আশায় অনেক বেকার যুবকও ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পানচাষে ঝুঁকেছেন।

জেলার এ উপজেলায় বর্তমানে ৫১ হেক্টর জমিতে ৪০০টি পানের বরজ গড়ে উঠেছে। যেখানে গত বছর পান চাষ হয়েছে ৪৮ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয় এ পান। কিন্তু এবার আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব, বিশেষ করে অনাবৃষ্টির কারণে পানের বরজে দেখা দিয়েছে গোড়া ও পাতাপচা রোগ। এসব পান কম দামে বিক্রি হওয়ায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন কৃষক।

বরকামতা গ্রামের পানচাষি সুশান্ত দাস বলেন, ‘পান চাষের সমস্যা হলো গোড়াপচা রোগ। গাছগুলো মরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অনেক গাছের পানও পচে যাচ্ছে। ফলে আমার ২৫ কাঠা জমির বরজ থেকে আগে যেখানে ৪৫-৫০ হাজার টাকার পান বিক্রি করতাম, এখন সেখানে ১০ হাজার টাকাও আসছে না। আর এতে করে খৈল কেনা, শ্রমিকসহ অন্যান্য যে খরচ হয়েছে, তাই উঠবে না। এভাবে চললে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’

একই উপজেলার বাগুরা গ্রামের শ্যামল দাস বলেন, ‘এক বস্তা খৈলের দাম ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা। এক মৌসুমে বরজে খৈল লাগে ১০-১২ বস্তা। অথচ এবার যে টাকার পান বিক্রি হবে, তাতে করে তিন-চার বস্তা খৈলের দাম উঠানো অসম্ভব। পানের দাম ভালো থাকলেও পাতাপচার কারণে কম পাওয়া যাচ্ছে। ওষুধ দিয়েও পানের মড়ক বন্ধ করা যাচ্ছে না।’

দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজনের তুলনা জনবল সংকট আছে। ছয় কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র তিন জন দিয়ে সমগ্র উপজেলা কাজ করছি। তবে পানচাষিদের বিষয় আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। নানা রোগ-বালাই রোধে পরামর্শ দিচ্ছি প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া কৃষকদের পান চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নানা প্রচারণা চালাচ্ছি।’

পান চাষ লাভজনক হওয়ায় কুমিল্লার ৭টি উপজেলায় পান চাষ দিন দিনই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু এ বছর আগাম শীতকালীন রোগবালাই উল্টো হতাশ করেছে চাষিদের।

জেলা চান্দিনার উপজেলার কাঁঠেরপুল এলাকার পানচাষি শরীফুল বলেন, বরজ মালিকরা এবার হতাশ হয়েছেন। লাভ তো দূরে থাক, খরচই তুলে আনা সম্ভব হবে না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানের পচা রোগ। কৃষি কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিলেও কোনো ওষুধ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। গাছের গোড়ায় ঘায়ের মতো হচ্ছে, ঠিক পুড়ে গেলে যেমন হয়, ওই রকম। ফলে বরজ বাঁচাতে পানের আক্রান্ত সব গাছ উঠিয়ে ফেলে দিতে হচ্ছে। তাই এবারে পান চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এটা ছত্রাক জাতীয় রোগ। পুরনো গাছগুলো বেশিদিন জমিতে থাকলে এ রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া এবার কম বৃষ্টিপাতের কারণে কিছু কিছু পানের বরজে পচন দেখা দিয়েছে।

এ রোগ প্রতিরোধে জেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো ফল পেতে পারেন কৃষকরা।

আরো পড়ুন