ব্রাহ্মণপাড়ায় এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বজনদের দাবী পরিকল্পিত হত্যা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার পশ্চিম চন্ডিপুর গ্রামে শারমিন আক্তার (১৮) নামের এক গৃহবধুর গলায় ফাঁস দিয়ে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। গৃহবধুর স্বজনদের দাবী, পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে বসত ঘরের পাশে কাঠাল গাছের নিছে ফেলে রাখা হয়েছে গৃহবধু শারমিনকে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। এঘটানায় শারমিনের প্রাক্তন স্বামী সোয়েম ও পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে।

নিতহ শারমিন আক্তার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম চন্ডিপুর গ্রামের মান্নান সরকারের মেয়ে। এবং তার প্রাক্তন স্বামী সোয়েম ভূইয়া একই বাড়ির বাহারুম ভূইয়া ছেলে। তারা গত দুই বছর পূর্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

নিহত শারমিন আক্তারের ভাই জাকির হোসেন জানান, আমাদের একই বাড়ির বাহারুম ভূইয়ার ছেলে সোয়েম ভূইয়ার সাথে আমার বোন শারমিন আক্তার (১৮) এর পারিবারিক ভাবে ইসলামিক শরিয়া মতে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে সোয়েম আমার বোনের সাথে সব সময় দূর ব্যবহার করতো। বিয়ের এক বছর এভাবেই নির্যাতন সহ্য করে সংসার করার পর আমার বোনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর আমার বোন আমাদের সাথে সুন্দর ভাবে বসবাস করে আসছিল। গত কয়েক মাস যাবত সোয়েম শারমিনের সাথে আবার পূণরায় যোগাযোগ করে আবারো সম্পর্ক তৈরী করে। এরপর ঘটনার ৫দিন পূর্বে সোয়েম আমার বোনকে নিয়ে পলিয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন দিকে খোঁজা খোঁজি করে তাদের সন্ধান পাইনি। পরে আজ সকালে আমরা লোক মারফত জানতে পারি সেয়েমের বসত ঘরের উত্তর দিকের একটি কাঠাল গাছের নিচে আমার বোন শারমিনের মৃতদেহ পরে আছে। খবর পেয়ে আমি ও আমার পরিবারের লোজন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আমার বোনকে মৃত অবস্থায় কাঠাল গাছের নিচে পরে থাকতে দেখি। এছাড়াও ওই কাঠাল গাছের ডালে শারমিনের পরিহিত ওড়না বাধা অবস্থায় ঝুলছিল।

পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হলে দেবিদ্বার-ব্রাহ্মণপাড়া সার্কেল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিরুল্লা এবং ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আজম উদ্দিন মাহমুদ, অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোঃ জাকির হোসেন, এসআই বাবুল হোসেন ও এসআই সফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স সহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সরজমিনে তদন্ত করেন। এসময় নিহত শারমিনের লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য (কুমেক) হাসপাতালের মর্গে পেরণ করেন। আমাদের দাবী আমার বোন আত্মহত্যা করেনি তাকে তার প্রাক্তন স্বামী সোয়েম রাতের আধারে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে এই গাছের নিচে ফেলে রেখেছে এবং আত্মহত্য বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে কাঠাল গাছে শারমিনের গায়ের ওড়না ঝুলিয়ে রেখেছে।

এদিকে শারমিনের প্রাক্তন স্বামী সোয়েমের মা দেলোয়ারা বেগম জানান, আমার ছেলে সোয়েমের সাথে একই বাড়ির শারমিনের ২বছর পূর্বে বিবাহ হয় এবং বিয়ের একবছর পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে আমার ছেলে সোয়েম বাড়িতে থাকে না এবং ঘটনার দিনও সে বাড়িতে ছিল না। শারমিনের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।

এলাকাবাসী জানান, আমরা সোয়েমের বসত ঘরের উত্তর পাশের একটি কাঠাল গাছের নিচে শারমিনকে মৃত অবস্থায় পরে থাকতে দেখি। কিন্তু আমরা কেউ শারমিনকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকতে দেখিনি। পরে আমরা শারমিনের স্বজনদের খবর দেই এবং তার স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত শারমিনের লাশ উদ্ধার করে।

এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানা অফিসার ইনার্চাজ আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই নিহত শারমিনের মৃতদেহ সোয়েমের বসত ঘরের উত্তর দিকের একটি কাঠাল গাছের নিচে পরে আলে এবং কাঠাল গাছের ডালে শারমিনের গায়ের ওড়না বাধা অবস্থায় ঝুলে আছে। এসময় তার গলায় ফাঁসের চিহ্ন ও বাম কানে রক্তক্ষণ দেখা যায়। আমরা শোরতহাল প্রতিবেদন শেষে নিহতের লাশ ঘটনস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে জানা যাবে ঘটনার মূল রাহস্য, হত্যা নাকি আত্মহত্যা। এই সংবাদ লিখা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

আরো পড়ুন