ব্রাহ্মণপাড়ায় পরকিয়ার জের ধরে ২ সন্তানের জননীর আত্নহত্যা

আশিকুর রহমানঃ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বিষপান করে আত্নহত্যা করেছে ২ সন্তানের জননী এক প্রবাসীর স্ত্রী। স্বজনদের দাবী পারিবারিক ডাক্তাররের পরকিয়ার জের ধরেই আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে নাজমা বেগম (২৭)।

৮ অক্টোবর বিকেলে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর এলাকায় ভাড়া বাসায় সবার অজান্তে নাজমা বেগম বিষ পানের ঘটনাটি ঘটায়। আত্নহত্যার পরোচনার অভিযোগে স্বজনরা থানায় অভিযোগ দাখিল করেছে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপালে প্রেরণ করে। নিহত নাজমা বেগম ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া গ্রামের প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী এবং একই ইউনিয়নের ডগ্রাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ মিয়ার মেয়ে।

এই ব্যাপারে নিহত নাজমা বেগমের ছোট বোন হোসনা আক্তার জানান, আমার বোন গত ২ বছর যাবত ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার টিএনটি অফিসের পেছনে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে। ঘটনার দিন (সোমবার) বিকেলে আমার বোনের পাশের কক্ষের এক ভাড়াটিয়া আমাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়, আমার বোন বিষ পান করেছে। খবর পেয়ে আমি, আমার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম এবং আমার চাচা আঃ জলিল মেম্বার সহ অন্যান্য স্বজনরা ঘটনাস্থলে এসে আমার বোনকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক ভাবে আমার বোনকে ওয়াস ও চিকিৎসা করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপালে প্রেরণ করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার আমার বোনের অবস্থা অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। আমার বোন নাজমা বেগমকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপালে যাওয়ার পথে কাঁচপুর এলাকায় পৌছার পর আমার বোন মারা যায়। পরে আমরা আমার বোনের লাশ নিয়ে সেখান থেকে রাত আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটের সময় ব্রাহ্মণপাড়া থানায় এসে হাজির হই। এসময় থানা পুলিশের এস আই তীথংকর দাশ আমার বোনের লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপালে প্রেরণ করে।

এই ব্যাপরে নিহত নাজমা বেগমের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলা ধান্যদৌল বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী ইদ্দ্রীস মাষ্টারের ছেলে পল্লী চিকিৎসক হাবীবুর রহমান গত ৫-৬ বছর যাবত আমাদের বাবা মায়ের চিকিৎসা করে আসছেন। সেই সূত্র ধরে আমার বোন নাজমা বেগমের সাথে পল্লী চিকিৎসক হাবীবুর রহমানের পরিচয় হয়। আমার বোন নাজমা বেগমের স্বামী প্রবাসে থাকায় পল্লী চিকিৎসক হাবীবুর রহমান আমার বোনের একাকীত্বের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে পরকিয়ার সম্পর্ক গড়ে তুলে। আমাদের অজান্তে হাবীবুর রহমান আমার বোনের বাসায় আসা যাওয়া করতো। এই ব্যাপরে পল্লী চিকিৎসক হাবীবুর রহমানের পিতা ইদ্দ্রীস মাষ্টারের কাছে আমরা কয়েক বার অভিযোগ করেছি। তাতেও কোন ফল হয়নি। ঘটনার ২-৩ দিন পূর্বে আমার বোন ও হাবীবুর রহমানের মধ্যে তাদের পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে দন্দ্ব হয়। এনিয়ে আমার বোন নাজমা বেগম, তার ব্রাহ্মণপাড়ার ভাড়া বাসায় সোমবার বিকেলে কেরির ট্যাবলেট (বিষ)পান করে আত্নহত্যা করেছে।

অপর দিকে নিহত নাজমা বেগমের চাচা সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল জানান, নাজমা বেগম ও হাবীবুর রহমানের পরকিয়া প্রেমের বিষয়টি নিয়ে নাজমা সহ আমারা ডাক্তার হাবীবুর রহমান ও তার বাবা ইদ্দ্রীস মাষ্টারের সাথে অনেক বার কথা বলেছি। এই বিষয়ে ডাক্তার হাবীবুর রহমান ও তার পিতা কর্ণপাত না করে বিভিন্ন ভাবে ভয় ভিতি ও হুমকী ধমকি দেয় এবং গাল মন্দ করে। যার কারনে নাজমা বেগম আত্নহত্যা করেছে।

এছাড়াও ঐ ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য ফারুক আহাম্মেদ জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি এবং তার সত্যতাও পেয়েছি।

এই ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তীথংকর দাশ জানান, নিহত নাজমা বেগমের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে আত্নহত্যার পরোচনার অভিযোগে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এই ব্যাপারে পল্লী চিকিৎসক হাবীবুর রহমানের মোবাইল ফোনে (০১৯১৪৮৮৫৪৩৩) এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে চাইলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন