মায়ের কানের দুল বন্ধক রেখে ভাইভার শার্ট-প্যান্ট কেনেন সুব্রত

কথায় আছে সন্তান বড় হয়ে মা-বাবার কথা ভুলে গেলেও কোন অবস্থাতেই সন্তানকে ছেড়ে যায়না মা-বাবা। সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা বাবা-মায়ের একমাত্র চাওয়া। প্রতিষ্ঠিত হয়ে সন্তান দেখাশোনা করুক বা না করুক যুগ যুগ ধরে বট বৃক্ষের মতো নিজেদের ভূমিকা পালন করে আসছে মা-বাবা।

মা-বাবা সন্তানের জন্য কি না করতে পারে। সেটার আরেকটা দৃষ্টান্ত গড়লেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার এক মা। সম্প্রতি দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মায়েরা কিভাবে ছেলেদের পাশে থাকে সেই গল্প শোনালেন সুব্রত মণ্ডল নামের এক যুবক। তিনি এবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মেধাতালিকায় ৫৬তম হয়েছেন তিনি। সুব্রত উপজেলার চর মহেশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং দ্বারিয়াপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

সাক্ষাৎকারে নিজের সফলতার গল্প বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন কোর্সের ভাইভার আগে বন্ধুদের কাছ থেকে জুতা, শার্ট ধার করতাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি পদে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ভাইভার জন্য ডাক পড়লে ফরমাল শার্ট, প্যান্ট ও জুতা কোথায় পাব এই নিয়ে চিন্তায় পড়ি। কারণ, ফরমাল পোশাক কেনার মতো সামর্থ্য ছিল না।

সুব্রত মণ্ডল বলেন, ভাইভার কয়েক দিন আগে আমার মা তাঁর কানের দুলজোড়া খুলে হাতে দিয়ে বলেছেন, বাবা, এটা বন্ধক রেখে তোর ভাইভার পোশাক কিনে নে। আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছিল। ভাইভা বোর্ডে ঢোকার সময় মায়ের খালি কান দুটো ভেসে উঠছিল।

অথচ সুব্রতর সফলতার পথটা মসৃণ ছিল না। দিনমজুর বাবা ও গৃহিণী মায়ের সংসারে বড় বাধা ছিল দারিদ্র্য। এসএসতিতে জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পেয়ে যান ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তি। সেই টাকায় পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পাওয়ার আবার ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তির জন্য মনোনীত হন।

উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তি ও টিউশনির টাকায় পড়াশোনা করে সিজিপিএ ৩.৬৯ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে স্নাতক পাস করেন তিনি।

নিজের সফলতাকে পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরে সুব্রত বলেন, এডি পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে গত অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকায় ঠিকমতো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। একজনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে কুরিয়ারে আগের বছরের প্রশ্নব্যাংক কিনে পড়াশোনা করি। কোনো কোচিং করিনি। গত ২৩ মে ফলাফলের তালিকায় নিজের রোল নম্বর দেখার পর আমার হাত–পা কাঁপা শুরু করে। মাকে ফোন করে কেঁদে বলেছি, মা আমার চাকরি হয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। মা-ও কেঁদে ফেলেন, পাশে থেকে বাবাও কাঁদেন, বোনও কাঁদে। এ কান্না আমার পরিবারের সংগ্রামের কান্না।

আরো পড়ুন