লকডাউনে কুমিল্লায় অর্ধেকে নেমেছে রেমিট্যান্স

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় লকডাউনে কুমিল্লার লাখো প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। যার কারণে দেশে থাকা ওই প্রবাসীর পরিবারগুলো আর্থিকভাবে সংকটে রয়েছে। লকডাউনের কারণে একদিকে আর্থিক সংকট, অপরদিকে বিদেশে থাকা স্বজনদের চাকরি হারানো কিংবা করোনার ছোবলের আতঙ্কে রয়েছেন কুমিল্লার কয়েক লাখ প্রবাসী পরিবার। এমন অবস্থায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাদের। যার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সের উপরও। চলতি মে মাসের এ পর্যন্ত কুমিল্লার রেমিট্যান্স অর্ধেকে নেমে এসেছে।

কুমিল্লা জেলা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সংখ্যা ও রেমিট্যান্সে কুমিল্লা জেলা সর্বোচ্চ। ২০০৫ সাল থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ জেলার দশ লাখ আঠারো হাজার বাসিন্দা কাজ নিয়ে বৈধভাবে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। কাজ ছাড়া স্টুডেন্ট ভিসা, চেইন ভিসা এবং অবৈধভাবে বিদেশে ঢুকেছেন আরও কয়েক লাখ। কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রমতে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৪ লাখের বেশি পাসপোর্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে হজযাত্রী, তীর্থযাত্রী, পর্যটক, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীও রয়েছেন।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার কাশিপুর গ্রামের এক নারী জানান, তার ছেলে ওমান এবং স্বামী আবুধাবিতে থাকেন। লকডাউনের কারণে দুই মাস ছেলের কাজ নেই। স্বামী কয়েকদিন লুকিয়ে কাজ করেছেন। নিজের খরচ কোনোমতে মিটিয়ে টাকা পাঠিয়েছেন ছেলের জন্য। কড়াকড়ি আরোপের কারণে এখন স্বামীর কাজও বন্ধ। স্বামী-সন্তান প্রবাসে থাকায় সরকারি ত্রাণ বা স্থানীয় সহায়তাও মিলছে না। এ অবস্থায় নিজেরা বাঁচবো, নাকি তারা বাপ-ছেলে বাঁচবে’– এ কথা বলে মুষড়ে পড়েন ওই নারী।

নাঙ্গলকোটের একই গ্রামের অপর এক নারীর দুই ছেলে ওমান প্রবাসী। তাদেরও কাজ নেই। পরিবার সামান্য ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু ভয় চাকরি হারানোর, দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার। ওই নারী পথে পথে হেঁটে তাদের জন্য কাঁদছেন।

কুমিল্লার সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকে কথা বলে জানা যায়, এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্সের প্রবাহে তেমন কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে মে মাসের এ পর্যন্ত কুমিল্লার রেমিট্যান্স অর্ধেকে নেমে এসেছে।

পাসপোর্ট অফিস কুমিল্লার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শামিম আহমেদ জানান, পাসপোর্টগুলোর মধ্যে রি-ইস্যুকৃত পাসপোর্টও রয়েছে। ভ্রমণকারীদের বেশির ভাগ শ্রমিক হলেও অন্যান্য কাজেও বিপুলসংখ্যক মানুষ পাসপোর্ট করেছে।

আসা-যাওয়ার পরিসংখ্যান বাদ দিলেও বর্তমানে প্রায় পনেরো লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বসবাস করছে। যার মধ্যে বেশির ভাগ কাজ করছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। সিঙ্গাপুর, ইউরোপ-আমেরিকাতেও জেলার বিপুল সংখ্যক লোক আবাসন গেড়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে প্রবাসী সর্বোচ্চ। এছাড়া কুমিল্লা থেকে অবৈধপথে মোজাম্বিকসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানো লোকের সংখ্যাও কম নয়। করোনা পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কাজ বন্ধ রয়েছে বেশির ভাগ শ্রমিকের। ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। কয়েকটি দেশে ভাতার ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে মে মাস ও তার পরবর্তী সময়ে রেমিট্যান্সে বিরাট ধাক্কা লাগার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কুমিল্লা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দেবব্রব ঘোষ জানান, যেহেতু বিদেশে অবস্থানরতরা বেশির ভাগ শ্রমিক। তাই জেলার রেমিট্যান্সে প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার আগে ছুটিতে আসা অনেক প্রবাসী ফিরতে না পেরে বেকার হয়ে পড়েছেন। এ সময়ে জেলার অন্তত ৫০ হাজার প্রবাসী দেশে আটকা পড়েছেন।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নরুল ইসলাম জানান, শুধুমাত্র মার্চ মাসে ১৫ হাজার ২৬৯ প্রবাসী কুমিল্লায় ফিরেছেন। এটা পাসপোর্টের হিসাব। এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

আরো পড়ুন