সন্ধ্যার পর দাউদকান্দি যেনো এক ভূতুরে নগরী!

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর কুমিল্লা জেলাকে “লকডাউন” ঘোষণা করেছেন আজ ৫ দিন। এর পরপরই কঠোর অবস্থান নিয়েছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যৌথ মহড়ায় চলছে চারোদিকেই জোরদার টহল। তবে মঙ্গলবার উপজেলায় দু’জন ব্যক্তির কোভিড-১৯ ভাইরাস পজিটিভের খবরে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরো বেশি কঠোর অবস্থানে চলে যায়। লোকজন অপ্রয়োজনে বের হতে পারছে না। সন্ধ্যার আগেই চিরচেনা জনাকীর্ণ এলাকাগুলো রূপ নেয় অচেনা ভূতুরে নগরী রূপে।

কার্যত কুমিল্লা জেলা লকডাউন ঘোষণার পরই জেলা প্রশাসকের জারিকৃত পরিপত্রে উল্লেখ্য ছিলো কুমিল্লা জেলার কোনো স্থানেই দেশের যেকেনো এলাকার বহিরাগত, আত্মীয় -স্বজন অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। আর এ অযাচিত অনুপ্রবেশ পুলিশ, আর্মি, ডিবিসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে অনেক সোচ্চার।

লকডাউন ঘোষণার ৫ম দিন চলছে আজ।এর মধ্য কুমিল্লা আন্তঃ জেলা, আন্তঃ উপজেলাগুলোতেও এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এক বাড়ির মানুষ অন্য বাড়িতে, এক ঘরের মানুষ অন্য ঘরে প্রবেশে কঠিন নিষেধাজ্ঞা চলছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি পুরপুরি আমলে নিয়ে শতর্কতার সাথে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা ফেরা করা।কিছুক্ষণ পরপর সাবান পানি ২০ সেকন্ড ধরে হাত ধুয়ে পরিস্কার হতে হবে। নিজে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন।একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মনোভাব তৈরি করতে হবে তা নাহলে এ গভীর সংকট কাটিয়ে ওঠা দুষ্কর। এসব দিক নির্দেশনায় লিফলেট, মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করছে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ।

মেঘনা-দাউদকান্দি উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করে বহিরাগতদের আগমন ঠেকাতে কাজ করছে। কোথায় কোথায় করোনা ঠেকানোর অজুহাতে রাস্তায় ব্যারিকেড, তালা দেয়া ও গাছের গুড়ি ফেলে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অভিযোগ পাওয়া যায়,” এবং রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার বিষয়ের ছবিগুলো স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেউ কেউ এর পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করতে দেখা যায়। তবে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন,” কিছু লোক অতিউৎসাহী হয়ে এ ধরনের কাজ করতে পারে।তবে আমি এ বিষয়ে যেহেতু এই প্রথম শুনলাম। অবশ্য বিষয়টি আমি মনিটরিংয়ে রাখবো।

কুমিল্লা জেলায় আজকে ৯ জনের মতো করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন উপজেলার লোক। আক্রান্তদের এর মধ্যে একজনের মৃত্যুও হয়েছে।

এখনই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর না হলে, করোনা আক্রান্তের বিষয়ে গ্রামে -গঞ্জে মানুষের এক ধরনের যে অবহেলা ও অসচেতন তা জনসচেতনতামূলক প্রচারের মাধ্যমে দূর করতে হবে। তবে গ্রামের কোনো ব্যক্তি যদি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয় সেটা বিদ্যুৎ আকারে বিস্তৃতি ঘটবে এমনটাই অনুধাবন করা যায়।তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি গ্রামগুলোতে রাখা প্রয়োজন মনে করেন সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

কুমিল্লা জেলা লকডাউন ঘোষণার পরদিন হতে প্রতিদিনই মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ জীপে করে পৌর এলাকায় জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ৬ টার পর ঘর থেকে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। তাছাড়া অপ্রয়োজনে কেউ বাসা-বাড়ি থেকে হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন কঠোর হুঁশিয়ারি ঘোষণার পর-প্রতিদিনই বেলা অস্ত যাওয়ার পরপরই জনশূন্য হয়ে যায় রাস্তাঘাট। কেউ জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হচ্ছে না। দুপুর ১ টার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মুদিদোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যা ৬ টার পর ওষধি দোকান (ফার্মেসি) ব্যতীত সব ধরনের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিাষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।”

আরো পড়ুন