কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশী যারা
ইমতিয়াজ আহমেদ জিতুঃ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর অর্ন্তকোন্দল ও সংঘর্ষের আশংকায় গত প্রায় ৬ বছরেও ঘোষিত হয়নি কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের কমিটি। যুবলীগের কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে চাপাঁ ক্ষোভ বিরাজ করছে। হতাশ হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। সাংগাঠনিক কার্যক্রমে ব্যঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তবে মহানগর যুবলীগে স্থান পেতে জোর লবিং করছেন যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে জেলা দক্ষিণ যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। ২০১১ সালের শেষের দিকে কুমিল্লা পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ পৌরসভা নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয়। ফলে মহানগর যুবলীগ কমিটি গঠনের দাবি উঠে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০১২ সালের জুন মাসে কুমিল্লা জেলা যুবলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। এরপরই মহানগর যুবলীগের কমিটিতে স্থান পেতে জোর লবিং শুরু করেন কুমিল্লা সদর সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার সমর্থিত নেতাকর্মীরা। অপরদিকে রেলমন্ত্রী মুজিব ও পরিকল্পনা মন্ত্রী লোটাস কামাল সমর্থিত গ্রুপের নেতাকর্মীরাও সক্রিয় হন। সম্প্রতি সদর সাংসদ হাজী বাহার কুমিল্লা মহানগর আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই কমিটিতে সিংহভাগ পদে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা স্থান পায়। কয়েকটি পদ পায় অপর গ্রুপের নেতাকর্মীরা। ফলে মহানগর যুবলীগের বেশিরভাগ পদে এমপি বাহারের সমর্থিত নেতাকর্মীরা স্থান পাবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে থেমে নেই রেলমন্ত্রী মুজিব গ্রুপের নেতাকর্মীরাও ।
শোনা যাচ্ছে আগামী ২০১৮ সালের শুরুতে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কিংবা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হতে পারে।
যে কারণে কমিটি ঘোষণায় বিলম্বঃ
অর্ন্তকোন্দল ও সংঘর্ষের আশংকায় কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের কমিটি ঘোষিত হচ্ছে না বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। বিভিন্ন সূত্রমতে, সদর সাংসদ হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহারের সাথে রেলমন্ত্রী মুজিব ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোস্তফা কামাল ( লোটাস কামাল) এর কিছুটা অর্ন্তকোন্দল বিরাজমান থাকায় কমিটি ঘোষণায় রণাঙ্গনের সম্ভাবনায় মহানগর কমিটি ঝুলে আছে। এক বছর পূর্বে কুমিল্লা টাউনহলে ছাত্রলীগের সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল হত্যাকান্ডের পর রেলমন্ত্রী ও আফজল খান গ্রুপের নেতাকর্মীদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়েরের পর রেলমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা নগরীতে তেমন আসেনি। তবে বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের সাথে এমপি বাহারের সম্পর্ক বেশ ভালো বলে জানা গেছে। তাছাড়া রেলপথমন্ত্রীর সাথেও আগের মত খারাপ সম্পর্ক নেই। তবে ভেবে চিন্তে সময় নিয়ে মহানগর যুবলীগ কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
মহানগর যুবলীগ কমিটিতে স্থান পেতে মরিয়া দু’গ্রুপঃ
মহানগর যুবলীগের কমিটিতে স্থান পেতে সদর সাংসদ ও কুমিল্লা মহানগর আ’লীগের সভাপতি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের গ্রুপে আহবায়ক পদে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক জিএস আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ ও যুগ্ম-আহ্বায়ক পদে কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, জেলা যুবলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক এ কে এম হাসান ইমাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বোরহান মাহমুদ কামরুল, অজিতগুহ কলেজের সাবেক জিএস বাবু সঞ্জয় রায়, হান্নানুর রহমান বেলাল তদবির করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্মসম্পাদক জিয়াউল হক মুন্না, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ-সম্পাদক কবির উদ্দিন মিন্টু, মিঠু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রোকন উদ্দিন, দিদারুল হক আনোয়ার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল ইসলাম শাওন প্রমুখ।
অপরদিকে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব গ্রুপে রয়েছে একাধিক নেতাকর্মীর নাম। এ গ্রুপে আহবায়ক/সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্মসম্পাদক তারেকুল হক তারেক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কুমিল্লা সরকারি কলেজের জিএস, শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান খান পিন্টু , জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ- সভাপতি মীর সাব্বির আহমেদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক কাজী নাহিদুল ইসলাম নাহিদ , শহর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন দাস, ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম খান তদবির করছেন বলে জানা গেছে ।
প্রস্তাবিত মহানগর কমিটি জমা দিয়ে এমপি বাহারঃ
বিভিন্ন সূত্রমতে, কুমিল্লা সদর সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ৭১ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর যুবলীগের প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়ে রেখেছেন। সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক জিএস আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ ও যুগ্ম-আহ্বায়ক পদে কুসিক ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, জেলা যুবলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক এ কে এম হাসান ইমাম, অজিতগুহ কলেজের সাবেক জিএস বাবু সঞ্জয় রায়, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বোরহান মাহমুদ কামরুল, হান্নানুর রহমান বেলাল এর নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
মূল লড়াই কাদের মধ্যেঃ
আহ্বায়ক পদে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ ও জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্মসম্পাদক তারেকুল হক তারেক এর মধ্যে মূল লড়াই হবে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে তারেকুল হক তারেক কুমিল্লার মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নয় বলে একাধিক সূত্র জানান। এদিকে সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক বা সাধারণ সম্পাদক পদে কুমিল্লা সরকারি কলেজের জিএস আতিকুর রহমান খান পিন্টু , কুসিক কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী ও জেলা যুবলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক এ কে এম হাসান ইমাম এর মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে একাধিক সূত্র জানান।
আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ জানান, কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ কমিটি না থাকলেও সাংগাঠনিক কর্মকান্ড থেমে নেই। কুমিল্লা মহানগর আ’লীগের সভাপতি ,সদর সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার মহোদয়ের সঠিক দিক নির্দেশনায় যুবলীগ সাংগাঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কমিটি ঘোষিত হলে সংগঠনের কার্যক্রম আরো বেগবান হবে। কমিটি ঘোষণা হলে সংঘর্ষের আশংকা নেই। আর আমাদের মাঝে কোন অর্ন্তকোন্দলও নেই। কুমিল্লা মহানগর রাজনীতি সদর সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার সঠিকভাবে পরিচালিত করছেন। কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের আহবায়ক পদের জন্য আমি একক প্রার্থী। আমি আশাবাদি কেন্দ্রীয় নেতারা দলের জন্য আমার অতীত কর্মকান্ড বিবেচনা করে আমার প্রতি সুবিচার করবেন। আমার প্রতি কুমিল্লা মহানগরবাসি ও সদর সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা আকম বাহার উদ্দিন বাহার ভাইয়ের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমি দায়িত্ব পেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও সদর এমপি বাহারের দিক নির্দেশনায় মহানগর যুবলীগকে সুসংগঠিত করবো। আমি কুমিল্লার স্থানীয় সন্তান, আমি অনেক আগে থেকেই যুবলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। অতীতেও কুমিল্লার মানুষের জন্য কাজ করেছি,ভবিষ্যতেও দলের সঙ্গে থেকে কাজ করে যেতে চাই। কুমিল্লার যুব সমাজকে সুসংগঠিত করে একটি প্রগতিশীল ও কার্যকরী সংগঠন করা আমার পক্ষেই সম্ভব।
আতিকুর রহমান খান পিন্টু জানান, কুমিল্লার মাটি ও মানুষের নেতা রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের সঠিক দিক নির্দেশনায় গত ২৭ বছর ধরে কুমিল্লার রাজনীতিতে আমি সক্রিয় রয়েছি। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমাদের নেতা মুজিবুল হক মুজিবের নির্দেশনায় বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে থেকে আন্দোলন করেছি। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে মাঠে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। আমি মহানগর যুবলীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। আমি আশা করি দলের প্রতি আমার আন্তরিকতা , অতীত ইতিবাচক সাংগাঠনিক কার্যক্রম বিবেচনা করে দল আমার প্রতি সুবিচার করবে ।
তিনি আরো বলেন, মহানগর যুবলীগ কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব হওয়ায় নেতাকর্মীরা কিছুটা হতাশ। কমিটি ঘোষণা হলে দলের সাংগাঠনিক কার্যক্রম সুদৃঢ় হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আগামী দিনে কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ দক্ষ নেতৃত্বের হাতে তুলে দিবেন এ প্রত্যাশা করি। কারণ কমিটি যদি দক্ষ লোক না দিয়ে করা হয়,তাহলে দলের সাংগাঠনিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি ঘটে।
হাবিবুর আল আমিন সাদী জানান, মহানগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে আমি ইনশাল্লাহ সাধারণ সম্পাদক পদ পাবো বলে আশা করছি। আর আহ্বায়ক কমিটি হলে এক নং যুগ্ম-আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশী আমি। আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করছি। কুমিল্লা সদর সাংসদ ও কুমিল্লা মহানগর আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় আমি মাঠে থেকে যুবলীগের রাজনীতি করছি। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে সবার সাথে মিলে প্রতিরোধ করতে মাঠে ছিলাম। আশা করি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও কুমিল্লা সদর সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার মহোদয় আমার কাজের মূল্যায়ন করে যুবলীগের রাজনীতি করার সুযোগ দিবেন।
এ কে এম হাসান ইমাম জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ভিশন ২০২১ সফল করার জন্য কুমিল্লার গণ মানুষের নেতা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার যেভাবে কুমিল্লাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তারই ধারবাহিকতায় কুমিল্লা মহানগর যুবলীগকে একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক সংগঠনের সহযোগি সংগঠন হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তার ধারক ও বাহক। আগামীতে আমাকে যদি মহানগর যুবলীগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য মনে করা হয়, তাহলে আমি ওই পদ প্রত্যাশি। ইনশাল্লাহ সদর এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দোয়ায় আমি এই পদ পাবো বলে আশা করছি। তবে দীর্ঘদিন যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, তাদেরকে যুবলীগের কমিটিতে আনা হলে সাংগাঠনিক কার্যক্রম সুদৃঢ় হবে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে জেলা দক্ষিণ যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। তৎকালীন যুবলীগের জেলা সভাপতি ও বর্তমানে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঐ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী শেখ ফজলুল করীম সেলিম। সম্মেলনে কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন শাহিনুল হক শাহিন এবং সাধারণ সম্পাদক হন মঞ্জুর মোর্শেদ। এদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি। এই কমিটি দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করে। গত ২০১২ সালের জুন মাসে জেলা কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়।