সাবেক আইনমন্ত্রীর তেলেসমাতিতে চাকরি মেলে ২২ জনের
ন্যায়বিচারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল আদালত। আর সেই আদালতের রক্ষকরাই যখন হয়ে যায় ভক্ষক। এ যেন ‘বেড়া খেলো খেত’। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ জেলা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই বছর আগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
আদালতের বিচারকরাই নিজেদের খাসকামরায় পছন্দের পরীক্ষার্থীদের বসিয়ে গোপন পরীক্ষা নিয়েছিলেন সেই ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাতজন ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে লিখিত অভিযোগ দেন। তারা হলেন- মো. জাফর ইমাম, মো. মঞ্জুর আলম, আকাশ সাহা, বিপুল রাহা, মো. রিজন আহম্মেদ, মো. শাহিন রেজা. মো. শিহাব উদ্দিন। তাদের লিখিত অভিযোগসহ দুর্নীতির কিছু নথিপত্র ছবি এরইমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
জানা যায়, আদালতের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, প্রসেস সার্ভার, অফিস সহায়ক, নাজির, হিসাবরক্ষক, বেঞ্চ সহকারী, ক্যাশিয়ার, লাইব্রেরি সহকারী, অফিস সহায়ক, নৈশপ্রহরীসহ ৩৪ পদে নিয়োগে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। নিয়োগ কমিটির প্রধান ছিলেন সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা নাজির (বর্তমানে রংপুরে কর্মরত)। নিয়োগ, বাছাই ও পরীক্ষা গ্রহণ-সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ছিলেন সদরের সিনিয়র সহকারী জজ মিনহাজ উদ্দিন ফরাজী এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তানবীর আহম্মেদ। কমিটির সভাপতি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম সালমা খাতুন। সম্প্রতি অভিযোগ ও ছবি ভাইরালের বিষয়ে সবাই মুখ খুলতে নারাজ।
অভিযোগে জানা যায়, চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লারই ২২ জন নিয়োগ পান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সিরাজগঞ্জ জেলার প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার থাকলেও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশে তৎকালীন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা নাজিরের হস্তক্ষেপে ৩৪টি পদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লারই ২২ জন নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রার্থীদের বেশি নম্বর পেতে বিচারকদের খাসকামরায় বসিয়ে পরীক্ষা নেন।
এরইমধ্যে গোপনে পরীক্ষা নেয়ার ছবি ফাঁস হওয়ার পর শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের নাজির রবিউল হাসান, তাড়াশ সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মুনতাছির মামুন ও কাজীপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী সাব্বির হোসেনের চাকরি স্থায়ীকরণ আটকে যায়।
তবে, ৩১ জনের আগেই চাকরি স্থায়ী হয়ে গেছে। সিরাজগঞ্জের সচেতন মহল সব নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে সুষ্ঠুভাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান করেন। তবে চাকরি স্থায়ীকরণ আটকে যাওয়ার বিষয়ে তিন কর্মচারী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
সিরাজগঞ্জ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ দফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার পাশা বলেন, সিনিয়র সহকারী জজ আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সিরাজগঞ্জের তৎকালীন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা নাজিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ছাড়াও তার হোয়াটসঅ্যাপে অনিয়মের বিষয়ে বার্তা দিলেও তার কোনো উত্তর মেলেনি।