ছাত্রলীগের দুই নেতার কাছ থেকে ছাত্রদল নেতাদের চাঁদাবাজির অভিযোগ
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মামলার ভয় দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দিনদিন বেড়েই চলেছে ছাত্রদলের চাঁদাবাজি। সবশেষ রড দিয়ে মারধর ও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১০ হাজার ১০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের আসন্ন কমিটির দুই পদপ্রার্থীর নামে। টাকা লেনদেনের একটি স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েট সংলগ্ন অক্টয় মোড় ফ্লাইওভারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তবে চাঁদাবাজি নয়, ছোট ভাইয়ের পাওনা টাকা আদায় করে দিয়েছেন বলে দাবি অভিযুক্তদের।
এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিন ছাত্রদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় শাখা ছাত্রদল।
ভুক্তভুগী ছাত্রলীগ নেতাদের একজন মনিরুল ইসলাম জয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। তার বাসা মানিকগঞ্জের সিংগাইরে।
অন্যজন হলেন সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতারা হলেন জাকির হোসেন ও তাকবির আহমেদ ইমন। জাকির সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিতে না থাকলেও আসন্ন কমিটিতে তিনি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে।
তাকবির আইবিএ ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনিও আসন্ন কমিটির পদপ্রত্যাশী এবং বহিষ্কৃত ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আহসান হাবিবের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা জয়ের ভাষ্যমতে, দুই সপ্তাহ আগে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী নোমানের (ছাত্রদলের রাজনীতির যুক্ত) মাধ্যমে তাদের দেখা করতে বলেন জাকির হোসেন। দেখা করতে গেলে জাকির তাদের বলেন, তোমরা আমার বিভাগের জুনিয়র। তোমাদের কাছ থেকে আমি কীভাবে টাকা নেবো?। ওইদিন টাকা না চাইলেও পরেরদিন মমতাজউদ্দিন কলা ভবনের সামনে জাকিরের সঙ্গের জয়ের দেখা হয়। এসময় ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের পরিবারের আর্থিক অবস্থা জানতে চান জাকির হোসেন। সাব্বিরের পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ জানতে পেরে জাকির বলেন, এত টাকা দেওয়া লাগবে না তোদের। ১০ করে দুজনে ২০ হাজার টাকা দিলেই হবে।
সাব্বির টাকা দিতে পারবেন না বলে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয় তাদের। মঙ্গলবার রাতে জয়ের বন্ধু সাজুর মাধ্যমে তাদের আবারও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ফ্লাইওভারে ডাকা হয়। তখন ছাত্রদল নেতা জাকির, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য তাকবির আহমেদ ইমন, ছাত্রদল নেতা রাজুসহ আরও ১০-১২ জন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় টাকা দিতে না চাইলে থানায় তুলে দেওয়া এবং রড দিয়ে পেটানোর হুমকি দেন ছাত্রদল নেতারা। একপর্যায়ে ১০ হাজার টাকায় কাজ হবে না, লাখ টাকা দিতে হবে বলে ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম জয়কে জানান জাকির। জয়ের পক্ষে লাখ টাকা দেওয়া সম্ভব না বলে জানালে ছাত্রদলের এক নেতা তার কলার চেপে ধরেন এবং তার ফোন কেড়ে নেন।
জয় আরও জানান, অভিযুক্ত সাজু জানতেন তার নগদ অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা আছে। তখন জাকির বলেন, আজকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৪০ হাজার টাকা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে দিবি। নয়তো তাকে থানায় তুলে নেওয়া হবে। এসময় ভুক্তভোগীর নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে ১১০০ টাকা সাজুর অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। যার প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আমি ১৮ জুলাই ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলন করি। ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের থেকে রেহাই পাচ্ছি না। মামলার ভয়ে এতদিন কাউকে বলিনি। আমি ছাত্রদল নেতাদের বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ছোট ভাই সাজু ছাত্রলীগ নেতা জয়ের কাছে টাকা পেতো। সে টাকা তুলতে না পারায় আমাকে জানালে আমি জয়কে (ভুক্তভোগী) ডাকি। পরে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করে দেই।’
ঘটনাস্থলে ছিলেন না জানিয়ে অভিযুক্ত আরেক ছাত্রদল নেতা তাকবির আহমেদ ইমন বলেন, আমি এসময় হলে ছিলাম। আপনারা আমার হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পারেন। তবে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন।
জয়ের বন্ধু অভিযুক্ত সাজু বলেন, ‘আমার মোবাইলে টাকা আসছে বিষয়টি সত্য। তবে সেটি চাঁদাবাজির টাকা নয়, আমার ব্যক্তিগত পাওনা টাকা ছিল। জয় টাকা দিচ্ছিল না। তাই তার কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করেছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে থেকে অনেকেই চাঁদাবাজি করছেন। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সেই সুযোগ নেই। তারপরও যদি কোনো ছাত্রদল নেতা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকেন এবং তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।