আকবর হোসেনঃ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে মধ্যযুগীয় কায়দায় মাদরাসা শিক্ষক কর্তৃক এক শিশুকে নির্যাতনের ঘটনাটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
পরে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু আসলাম নজরে বিষয়টি আসলে তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে সার্বিক অবস্থার অবলোকন করেন। শিশুটিকে নিজের গাড়ি দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান। এছাড়াও গতকাল শনিবার শিশুটির পিতাকে তার কার্যালয়ে ডেকে নির্যাতিত শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন তিনি। এদিকে ভাড়া করা হাফেজিয়া মাদ্রাসাটি বন্ধ করা হয়েছে। শিশুর পিতা মামলা করতে রাজি না হওয়ায় নাথেরপেটুয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই শিক্ষককে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
গত শুক্রবার মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এবং নাথেরপেটুয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ জামির হোসেন জিয়ার সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে সঙ্গীয় ফোর্স অভিযুক্ত শিক্ষক এমদাদ হোসেনকে তার নিজ এলাকা লক্ষণপুর ইউনিয়নের মান্দুয়ারা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
জানা যায়, উপজেলার বিপুলাসার নূরানী হাফেজীয়া ইসলামি একাডেমির প্রথম জামাতের পাঁচ বছরের এক শিশু ছাত্রকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম এমদাদ হোসেন (৩০)। শিশুটির নাম মোঃ নোমান (০৫)। সে বিপুলাসার ইউনিয়নের কাঁচি গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন যাবৎ শিক্ষক শিশুটিকে ভাল ভাবে পাঠ দেওয়ার নাম করে ঐ শিক্ষক তার আবাসিক হোস্টেলে রেখে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় গত কয়েকদিন যাবৎ তার বাবা মা তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বিভিন্ন কথা বলে তাদের সাথে দেখা না করিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় শিশুটির বাবা মায়ের মনে সন্দেহ জাগলে তারা জোর করে তার সাথে দেখা করতে যায়। তারপর তারা শিশুটিকে দেখে আৎকে উঠে। শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালছে পড়া দাগ দেখতে পায়। এছাড়াও শিশুর দুই উরুতে বেতের আঘাত দেখতে পাওয়া যায়। শিশুর চোখ মুখে আঘাতের ছাপ দেখে তারা চিৎকার করা শুরু করেন। শিশুর সাথে কথা বলে জানা যায় ঐ শিক্ষক শিশুটির গোপনাঙ্গে গরম পানি ঢেলেও নির্যাতন করে। এমতাবস্থায় শিশুটির বাবা মায়ের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে ঐ স্থান। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে এই শিক্ষকের নামে একাধিক ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। শিশু নির্যাতনের খবর ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকার সচেতন মানুষ ঐ শিক্ষককে বিচারের আওতায় এনে সুষ্ঠ বিচার দাবী করেন।
মনোহরগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, ওই শিশুকে নির্যাতিত অবস্থায় শিক্ষকের কাছ থেকে উদ্ধারের পর বার বার আমরা বলার পরেও পরিবারের লোকজন থানায় কোন মামলা করতে রাজি হননি। এরপরও আমরা মানবিক কারণে ঘটনাটি খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটকের চেষ্টা চালাই। কিন্তু ওই এলাকা থেকে সে পালিয়ে যায়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করি। থানায় মামলা রজু হওয়ার পর কয়েক ঘন্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক এমদাদকে তার নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করি। পরে গ্রেফতারকৃত আসামীকে গ্রেফতার কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com