মুরাদনগরে প্রতিবন্ধি মেয়েকে গণ ধর্ষণ
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা গ্রামে এক হিন্দু প্রতিবন্ধি মেয়েকে (১৬) গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মা বাদি হয়ে থানায় মামলা দিলে অভিযুক্তরা হত্যার হুমকি দেয়ায়, হুমকির ভয়ে মা মেয়ে গ্রাম ছাড়া।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, ইয়াবা সম্রাট জামাল (৩৫) কামাল্লা গ্রামের রুক্কু মিয়ার ছেলে ও একই গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান সামাদ মিয়ার ছেলে আরিফ (২৮)।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত মে মাসের ১৩ তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিবন্ধি পূন্যা বাড়ির পাশেই টিউবয়েল থেকে পানি আনতে যায়। পূর্বেই ওৎ পেতে থাকে জামাল, আরিফ ও তাদের সহযোগীরা মুখ চাপা দিয়ে তাকে কামাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে পরিত্যক্ত তাতী বাড়িতে নিয়ে গণধর্ষণ করেন। ভোর রাতে আনুমানিক তিনটায়, একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে শরিফ মিয়া প্রতিবন্ধি পূণ্যাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় মেয়েটির মা পরদিন ১৪ মে সোমবার স্থানীয় ইউপি মেম্বার জামালকে ঘটনাটি অবহিত করেন। জামাল ঘটনার শক্ত বিচার করে দিবেন বলে আশ^স্ত করেন। কিন্তু ঘটনার ১৮ দিন পার হলেও কোন বিচার না পেয়ে অসহায় মা বাদি হয়ে জামাল ও আরিফ দুজনের নাম উল্লেখ করে গতকাল থানায় মামলা দায়ের করেন। এখবর এলাকায় ছড়িয়ে গেলে অভিযুক্তরা মা মেয়েকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়। ভয়ে গতকাল সন্ধ্যায় মা মেয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। বাড়িতে গিয়ে মা মেয়েকে না পেয়ে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পূন্যা টিওবয়েল থেকে পানি আনতে গিয়ে তার ফিরতে দেরি হলে, বাহির হয়ে প্রথমে আমি তাকে খোজা খুজি করে না পেয়ে, লোক নিয়ে খোজেও তাকে পাইনি। পরে রাত তিনটার দিকে অচেতন অবস্থায় শরিফ পূণ্যাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। শরিফকে জিজ্ঞাসা করি পূন্যাকে কই নিছিলা তখন শরিফ বলে, ‘আমি নেই নি। রাত দুটায় জামাল ফোন করে আমাকে আসতে বলে ইউনিয়ন পরিষদের পাশে। আমি এসে দেখি পূণ্যা অচেতন অবস্থায় পরে আছে। তারা পরিকল্পনা করছে তাকে মেরে ফেরবে। আমি বলি গরিব মানুষ মারার দরকার নেই। আমি তার মাকে বুঝিয়ে দিয়ে আসবো এবং কোন দেন-ধরবার করতে বারণ করে আসবো এই বলে পূণ্যাকে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’প্রতিবন্ধির মা আরো বলেন, মেয়ের জ্ঞান ফিরে আসলে সে বলে, টিউবয়েলে পানি আনতে গেলে জামাল আমার মুখ চেপে ধরে আর আরিফসহ কয়েকজন তুলে নিয়ে যায় তাতী বাড়িতে। জামাল ও আরিফ ধর্ষন করার পর জ্ঞান হাড়িয়ে গেলে আর কিছুই মনে নাই তার। এই ঘটনা স্থানীয় মেম্বার জামালকে ঘটনার পর দিন জানালে সে কারো কাছে ঘটনা বলতে বারণ করে এবং আশ^স্ত করে উপযুক্ত বিচার করে দিবেন। বিচারে গরিমসি দেখে পরে থানায় গিয়ে ওসি সাবকে ঘটনা জালানে তিনি মামলা নেন। থানায় মামলা করেছি শুনে জামাল আমাকে ও আমার মেয়েকে হত্যা করে ফেলবে বললে, আমি ভয়ে মেয়েকে নিয়ে গ্রাম ছেড়েছি। পূণ্যাকে উদ্ধার করে আনা শরিফকে তার বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠো ফোন বন্ধ থাকায় সরাসরি এ ঘটনার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অভিযুক্ত মাদক স¤্রাট জামালের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সে গা-ঢাকা দিয়েছে। তার মুঠো ফোন বন্ধ থাকায় এ ঘটনার কোন বক্তব্য নেয়া যায়নি। অপর অভিযুক্ত আরিফও মুঠোফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
তবে তার বাবা কামাল্লা ইউপির সাবেক তিনবারের চেয়ারম্যান সামাদ মিয়া বলেন, বর্তমানে আমি কামাল্লা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি এবং সাবেক তিনবারের চেয়ারম্যান। শত্রুতা বশত আমার ছেলেকে এ ঘটনার সাথে জড়িয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকেই বলেন, জামাল কামাল্লা ইউনিয়নের একজন চিিহ্নত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় একাদিক মামলা থাকার পরও বর্তমান মাদক বিরুধী অভিযানের সময় দিব্বি মাদক বিক্রি করার পাশা পাশি নানান অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। তাকে শেল্টার দেয়ার অভিযোগ আছে ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামালের বিরুদ্ধে। মেম্বার জামালও হত্যাসহ আট মামলার আসামি। জামাল মেম্বারের মুঠো ফোনে একাদিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ফোন না ধরাতে।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ একে এম মনজুর আলম বলেন, প্রতিবন্ধি ধর্ষনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মা মেয়েকে সব রকমের সহযোগিতা আমরা দিব।