ডেস্ক রিপোর্টঃ কিছুদিন আগের ঘটনা। কুমিল্লা নগরীর নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেট। হঠাৎ কিছু মেয়ে ছেলেদের তাড়া করল। অবাক চোখে সে দৃশ্য দেখল পথচারীরা। মূলত ছেলেগুলো ছিল বখাটে। তারা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছিল। কিন্তু কথা হচ্ছে মেয়েগুলো এত সাহস কোথায় পেল? তারা কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এতে বেড়েছে তাদের প্রতিবাদের ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস। তাদের মতোই কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের দুই শতাধিক মেয়ে কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রশিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন- কারাতে শেখার মাধ্যমে মেয়েরা আত্মরক্ষার কৌশল এবং শরীর চর্চা শিখছে। এতে ইভ টিজিংসহ বিভিন্ন নেতিবাচক দিক থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছে।
নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে-মেয়েদের দ্রুত হাত পা চালানো। টগবগে ফুটছে একেকটি শিক্ষার্থীর মুখ। তাদের মুখের শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। সাদা পোশাকের ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেখতে সেখানে ভিড় করে উত্সুক মানুষ।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রাইমারিতে পড়া মেয়েরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাদের একজন সানজিলা তানহাজ। সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বড় হয়ে সে সাইন্টিস্ট হতে চায়। সঙ্গে আত্মরক্ষার জন্য সে কারাত শিখছে। নগরীর ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে আহমেদ আল আইয়ান অর্ক। সে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। চার বছর বয়স থেকে সে কারাতে শিখছে। এখন সে ব্রাউন বেল্টধারী। সে প্রকৌশলী হওয়ার সঙ্গে বড় কারাতে খেলোয়াড় হতে চায়।
নাজনীন আক্তার নামের একজন অভিভাবক জানান, তার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে সারিকা খান কারাতে শিখছে। মেয়েকে কারাতে শেখানোর পর তিনি তাকে একা স্কুলে পাঠাতে ভয় করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন মেয়ে নিজের পথ চলার প্রতিবন্ধকতা নিজেই দূর করতে পারবে। কুমিল্লায় কারাতে প্রশিক্ষণের প্রথম সংগঠন কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশন। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানু। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে কুমিল্লায় এই সংগঠন যাত্রা শুরু করে। প্রথমে কেউ তাদের সন্তানদের কারাতে শিখতে দিতে চাইতেন না। অনেকে মনে করতেন এখানে মারামারি শেখানো হয়। মারামারি শিখে তারা নষ্ট হয়ে যাবে। কারাতে মূলত একটি খেলা। এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।
দক্ষিণ এশিয়ার কারাতে ফেডারেশনের বাংলাদেশের পাঁচজন বিচারকের একজন ও কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের প্রশিক্ষক এস ইসলাম শুভ বলেন, কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে ক্লাবের প্রশিক্ষণার্থীরা দেশে-বিদেশে সফলতার সাক্ষর রেখেছে। ছেলেদের পাশাপাশি কুমিল্লার দুই শতাধিক মেয়েও কারাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এই ক্লাব ছাড়া, ফয়জুন্নেছা স্কুল, ওয়াইডব্লিউসি স্কুল এবং মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদেরও কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ঈদের পরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের ফি বেশি নয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে ছেলে-মেয়েরা স্বাস্থ্য রক্ষার সঙ্গে আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, বিত্তবান এবং সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও ব্যাপক আকারে কারাতে চর্চা ছড়িয়ে দিতে পারব। বিশেষ করে প্রশিক্ষণের জন্য একটি মেট প্রয়োজন। যা অনেক ব্যয়বহুল। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক রোমেন বলেন, কুমিল্লা ড্রাগন কারাতে অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লার একটি প্রখ্যাত কারাতে সংগঠন। তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা সব ধরনের সহযোগিতা করবে। মেট ক্রয়ের বিষয়েও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com