মো.জাকির হোসেনঃ বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। রাজধানী ঢাকার সাথে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লাসহ নোয়াখালী,লক্ষিèপুর জেলার লাখ লাখ মানুষের প্রধান ও একমাত্র সড়ক। দেশের পাইপলাইন খ্যাত মহাসড়কটির যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরকার সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কটি দু’লেন থেকে ফোর লেনে উন্নীত করেছে। পাশাপাশি দাউদকান্দি,মেঘনা ও কাচঁপুর এলাকায় ৩টি সেতু নির্মানের কাজও চলছে পুরোদমে।
বিপুল অর্থ ব্যয়ে সরকার মহাসড়কটি নির্মান করলেও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিনিয়ত। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের কোথাও না কোথাও সংস্কার কাজ করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। মহাসড়কের কোথাও দেবে গেছে,কোথাও বা ছোট-বড় অসংখ্য খানা-খন্দক সৃষ্ট হয়েছে,হচ্ছে।
পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে মানসম্পন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমছে। এই যখন অবস্থা তখন দ্রুতগতির যানবাহন চালকদের গাড়ি চালানোয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বৃষ্টির সময়।
সরেজমিন মহাসড়কের বিভিন্নস্থান ঘুরে পাওয়া চিত্রে দেখা গেছে, বিপুল টাকা ব্যয়ে জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি ফোরলেনে উন্নীতের স্বল্প সময়ের ব্যবধানে কুমিল্লার বিভিন্নস্থানে ছোট-বড় খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে, এখনো বহুস্থানে ছোট-বড় খানা-খন্দক আছে। ফলে প্রায়ই মহাসড়কের খানা-খন্দক ভরাটে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কাজ করেছে। এছাড়াও কুমিল্লা অংশের পদুয়ারবাজার, বেলতলী, ঝাগুড়ঝুলি, দুর্গাপুর, আলেখারচর, আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, কালাকচূয়া, নিমসার, কোরপাই, চান্দিনা, মাধাইয়া,ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় প্রতিনিয়ত মহাসড়কের উপরের অংশের পাথর তুলে পুনরায় সেখানে বিটুমিনের প্রলেপ দিচ্ছে। কিন্তু সেগুলোও দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় উল্লেখিত স্থানগুলোর কোথাও না কোথাও খানা-খন্দক সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত।
এদিকে বৃষ্টির পানি মহাসড়ক থেকে সরে যেতে পদুয়ারবাজার, কোটবাড়ি ,আলেখারচরচর, আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, ময়নামতি সেনানিবাস, নাজিরাবাজার এলাকায় বিপুল টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মান করলেও বৃষ্টির পানি সরাতে সেই ড্রেন কোন কাজে আসছেনা। রাস্তার পানি রাস্তায় জমে থাকছে,কিংবা ধীরগতিতে পানি সরছে মহাসড়ক থেকে। এতে বৃষ্টির সময় মহাসড়কের উপর পানি জমে চালকদের অসুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহনের গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
এছাড়াও মহাসড়কে চাঁদাবাজির কারণে অতিরিক্ত ভারবাহী যানচলাচলে মহাসড়কের বিভিন্নস্থান দেবে গেছে। দাউদকান্দি মেঘনা-গোমতী টোলপ্লাজা এলাকায় ওয়েট-স্কেল বসিয়ে অতিরিক্ত মালামাল বহন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ওই ওয়েট স্কেল’এ কর্মরত কিছু অসাধূ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারনে কাঙ্খিত সুফলও পাচ্ছেনা সরকার। ফলে দেশের প্রধান জাতীয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বিভিন্নস্থানের চরম বেহাল অবস্থা। এরবাইরে রয়েছে মহাসড়কের পাশে যত্রতত্র হোটেল, রেষ্টুরেণ্ট, অন্যান্য খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান । কোন নীয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা দোকানের ব্যবহারের পর উচ্ছিষ্ট খাবারসহ প্রায় সকল বর্জ্য মহাসড়কের উপর ফেলে দেওয়ায় সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। এই যখন মহাসড়কের চিত্র তখন সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসাধূ কর্মকর্তা-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজশে প্রতিনিয়ত নাম মাত্র সংস্কার কাজ করে যাচ্ছে।
মহাসড়কে চলাচলরত একাধিক বিলাসবহুল পরিবহনের বাস চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বিভিন্নস্থানে পাথর উঠে গেছে। কোন কোন স্থানে ছোট-বড় গর্ত। বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমে থাকায় আমাদের গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছি। এতে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌছঁতে পারছিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়,বিপুল টাকা ব্যয়ে সরকারের ফোরলেন প্রকল্পের নিম্নমানের কাজের কারণে এটা উদ্বোধনের পর থেকেই কোথাও না কোথাও সংস্কার কাজ চলছে। কাজের মান ভাৈেলা না হওয়ায় মহাসড়কের বহুস্থানে রোডডিভাইডার ভেঙ্গে গেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মহাসড়ক সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া,কিন্তু মেরামতের স্বল্পসময়ের ব্যবধানে ব্যয়বহুল সড়কটির বারবার সংস্কারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। এদিকে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার বলেন, প্রতিদিনই ঠিকাদাররা মহাসড়ক যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সংস্কার কাজ করছে। সড়কের পাশে জলাবদ্ধতার বিষয়ে বলেন, এটা সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে নিয়ে করবে। আমাদের সেই জনবল নেই রাস্তার পাশে ড্রেন পরিস্কার করে পানি নিস্কাশন স্বাভাবিক রাখার।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com