ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার গৌরব গোমতী নদী। একসময় এ নদীতে জোয়ার এলে টইটুম্বর জলরাশি দেখতে শহরের লোকজন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করতো। বন্যাও হয়েছে। ফসলের ক্ষতি হলেও পরবর্তী সময়ে পলিমাটিতে অধিক ফসল ফলিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। নদীর জল আর প্রকৃতির অবগাহন মানুষ মুগ্ধচিত্তে দেখতো। সেই চিরচেনা গোমতী নদী এখন তার নাব্যতা হারিয়ে অনেকটা খালে পরিণত হয়েছে। হারিয়েছে স্বাভাবিক সৌন্দর্যও। এরজন্য দায়ী নদী পাড়ের লোকজনই। আছে ভাসমান মানুষেরও উৎপাত। অবৈধভাবে দখল করেছে নদীর পাড়, বাঁধের অভ্যন্তরে গড়েছে বসত, দোকান পাট, রাস্তাঘাট, এমনকি সেতুও তৈরি করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবদুল লতিফ জানিয়েছেন জিরো পয়েন্ট তথা কটক বাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত গোমতী নদীর উভয় পাড়ে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ২ হাজার ৭শ ১৬ জন। ২৩ জুলাই দৈনিক কুমিল্লার কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘গোমতী নদীর বাঁধের অভ্যন্তরে অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ মানা হয় নি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবদুল লতিফ দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানান, অবৈধ দখলদারদের তালিকা জেলা প্রশাসনের অভিযোগের আগেই প্রেরণ করা হয়েছে। তবে তারা ‘আপগ্রেড লিস্ট চেয়েছিল। ‘আপগ্রেড লিস্ট’ খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ মো: আবু তালেব জানান, গোমতী নদী পাড়ের অবৈধ দখলদারদের পুরনো তালিকা এ বছর ২৩ মে জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। আপগ্রেডের কাজ চলছে ১-২ দিনের মধ্যে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, গোমতী নদীর উভয় পাড়ের মধ্যে বাম পাড়ে মোট অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৩শ ৯১ জন। এর মধ্যে জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গায় অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ৭শ ৪৪ জন, ১৫ কিলোমিটার থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গায় অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ২শ ৪৫ জন, ৪০ কিলোমিটার থেকে ৬৪ কিলোমিটার জায়গায় অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ২শ ৮৬ জন ও ৬৪ কিলোমিটার থেকে ৭৬.৩ কিলোমিটার জায়গায় অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ১শ ১৬ জন। অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে টিন সেড ঘর, দোকানঘর, টং দোকান ইত্যাদি।
গোমতী নদীর ডান পাড়ে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ১ হাজার ৩শ ২৫ জন। এর মধ্যে জিরো পয়েন্ট থেকে ৩৫ কিলোমিটার জায়গায় অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ৬শ ৯৬ জন, ৩৫ কিলোমিটার থেকে ৫৫ কিলোমিটার জায়গায় অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ৪শ ৪১ জন, ৫৫ কিলোমিটার থেকে ৬৫ কিলোমিটার জায়গার অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ১শ ৮৮ জন।
গোমতী নদীর পাড়ের অভ্যন্তরে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিও রয়েছে। তাদের অনেকে বাড়িঘর নির্মাণ করে ওখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
অবৈধ দখলদারদের আপগ্রেড লিস্ট জেলা প্রশাসনে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবদুল লতিফ বলেন, অফিস ও মাঠ পর্যায়ে লোকবলের অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে যানবাহন ও সরঞ্জামাদির। এরপরও এ অফিসে কর্মরত কর্মকর্তাও কর্মচারীগণ দায়িত্ববোধের আলোকে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com