ডেস্ক রিপোর্টঃ বঙ্গবন্ধুর রক্ত ঋণে বাংলাদেশ, প্রয়োজনে রক্ত দিবো গড়বো মোরা সুস্থ দেশ”এ প্রতিপাধ্যকে ধারণ করে পনের আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কুমিল্লা জেলায় এক লাখ লোকের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম চলছে। গত ১ আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে আজ নয় আগষ্ট নবম দিনেই আশি হাজারের চেয়ে বেশী লোকের রক্তের গ্রুপ নির্ণীত করা হয়েছে।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মত কাজে কুমিল্লার সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা আর উৎসাহ উদ্দীপনা কাজ করছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বাস্তবায়নে এবং বিএমএ,স্বাচিপ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতা,কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন,উপজেলা পরিষদ,ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন ও বিএমটিএর সহযোগিতায় রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাজটি চলবে আগামী পনের আগষ্ট পর্যন্ত।
এক লক্ষ লোকের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মত বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো:আবুল ফজল মীর জানান, এ আগষ্ট মাসেই জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এই ১৫ আগষ্ট আমাদের জাতীয় শোকের দিন। আমরা শোককে শক্তিতে পরিনত করে বঙ্গবন্ধুসহ ত্রিশ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তিন লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে অর্জিত যে বাংলাদেশ পেয়েছি, সে দেশের প্রজাতন্ত্রের একজন সেবক হিসেবে আমি মনে করি, অন্তত যেখানে দায়িত্বরত থাকবো সেখানে যেন রক্তের অভাবে কোন মানুষ মারা না যায়। এখন কুমিল্লার মত প্রগারমান একটি জেলায় জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছি।
জাতীয় চেতনাবোধ এবং দায়িত্ববোধের অংশ হিসেবে আমি মনে করি রক্তের গ্রুপ জানতে জেলাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করা একটি ভালো কাজ হবে। আর এমন কাজে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ বেশ কয়েকটি সরকারী দফতর ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠরকে যুক্ত করেছি। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মত বিষয়টি আগামী প্রজন্ম হিসেবে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ দলমত নির্বিশেষে সকল পেশাশ্রেণী ও ধর্মবর্ণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কার্যক্রমে সর্বাত্বক সহযোগীতা করা হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাজটি শেষ হলে আমরা একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ সংরক্ষণ করবো। এতে করে যে কোন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে কোন রোগীকে রক্ত সরবরাহ করা সহজ হবে।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কার্যক্রম সর্ম্পকে কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জণ ডা. মজিবুর রহমান জানান, আজ নবম দিনেই আমরা আশি হাজারের বেশী লোকের রক্তের জানান,রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছি। জেলার সকল উপজেলা সরকারী হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাজ চলছে। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে দেখে ভালোই লাগছে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি আশা করবো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্ণিমানে প্রত্যকেই প্রত্যেকের অবস্থান থেকে ভালো কাজের মধ্যে দিয়ে সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে যে ডাটাবেজ তৈরী করা হবে তা পুরো কুমিল্লাবাসীর জন্য উপকারে আসবে। কারন যে কোন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যে কোন রোগীর রক্তের প্রয়োজনে ডোনার খুঁজে পাওয়া সহজ হবে উল্লেখ করে কুমিল্লায় রক্তদানসহ সামাজিক সমস্যা সমাধানে সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহবায়ক সূচনা তাহসিন বাহার বলেন, গত দু বছর ধরে জাগ্রত মানবিকতার পক্ষ থেকে পাঁচ সহস্রাধিক রোগীকে জরুরি প্রয়োজনে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব সময় খোঁজ খবর রাখছে কোথায় কোন মুমূর্ষ রোগীর রক্ত লাগবে। রাতদিন যে কোন রোগীর রক্তের প্রয়োজনে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছে। গত দু বছরে পাঁচ সহস্রাধিক মুমূর্ষ রোগীকে সংগঠনের সদস্যরা রক্ত জোগাড় করে দিয়েছে। নিজেরাও রক্ত দান করছে। সে অভিজ্ঞতায় দেখেছি জরুরি প্রয়োজনে যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন সে গ্রুপের ডোনার খুঁজে পাওয়া কত কষ্টের। তবে এ বছর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় এবং ডাটাবেজ তৈরীর মত মহৎ এবং প্রয়োজনীয় কাজটি শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
আর এমন মহতি কাজে গত ১ আগষ্ট থেকে সূচী অনুযায়ী মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যান্ত অঞ্চলে জাগ্রত মানবিকতার ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী সদস্য তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি রক্তদানের মত মহতি কাজ আর কিছুই হতে পারে না। আর এমন কাজে রয়েছে ঐশ্ব্যরিক প্রশান্তি। এমন মহতি কাজে জাগ্রত মানবিকতা পরিবার সব সময় সচেষ্ট থাকবে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বাস্তবায়নে এবং বিএমএ,স্বাচিপ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতা,কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন,উপজেলা পরিষদ,ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন ও বিএমটিএর সহযোগিতায় রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাজটি চলবে আগামী পনের আগষ্ট পর্যন্ত। তবে আজ নবম দিনেই তা আশি হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যেভাবে জেলার সাধারণ মানুষ তাদের সচেতনা ও আগ্রহ দেখাচ্ছে তাতে আগামী পনের আগষ্ট পর্যন্ত বাকি থাকা ছয় দিনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো বেশী লোকের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা যাবে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com