মাসুদ আলমঃ সিংহ, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির খাঁচা শূণ্য হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা। পানি ও খাবারের অভাব এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ক্যান্সার, কিডনী ও লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে গেল বছর চিড়িয়াখানার যুবরাজ নামে সিংহটি মারা যায়। সিংহটি মারা যাওয়ার পর দেখার একমাত্র পশু ছিল দুইটি হরিণ। কয়েকদিন না যেতেই খাঁচায় ঢুকে কুকুরে হরিণ দুইটি মেরে ফেলেছে। বর্তমানে পশু-পাখি শূণ্য চিড়িখানায় এসে দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরছেন। এক সময় দর্শনার্থীদের আনাগোনায় কুমিল্লার এই চিড়িয়াখানাটি বেশ সরগরম ছিল বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংহ ও হরিণের খাঁচাগুলো খালি পড়ে আছে। বিশাল আকারের বিভিন্ন প্রজাতির পাখির খাঁচাসহ চিড়িয়াখানায় আরও একাধিক পশু-পাখির খাঁচা খালি পড়ে আছে।
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে সিংহ ও কুকুরের হাতে হরিণ মারা যাওয়ার পর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মেছো বাঘ ও চিতা বাঘের দুইটি বাচ্চা সংযুক্ত করা হয় চিড়িয়াখানায়। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল বাঘ দুইটি পৃথক দুইটি শুকনো খাঁচায় বন্দি হয়ে আছে। রোদে-গরমে একাকার হয়ে একটু ছায়ার আশায় দেয়ালের সাথে মিশে আছে। বন্দি এই মেছো বাঘ ও চিতা বাঘের জন্য খাঁচার ভিতর সবসময় পানির হাউজের ব্যবস্থা থাকতে বাধ্যতামূলক হলেও নেই কোন পানির ব্যবস্থা। স্থানীয় কয়েকজন কিশোর ও তরুণ জানায় এই পশু দুইটিকে সময় মত খাওয়াও দেওয়া হয় না। চিড়িয়াখানায় এছাড়াও কিছু বানর ও পাখি রয়েছে। সোনালী বানর, হনুমান, গন্ধকুল, ধনেশ পাখি, কলেম পাখি, টার্কি মোরগসহ দুইটি অজাগর সাপ রয়েছে। বাঘগুলোর খাঁচার মতো বানর ও সাপসহ সব পশুপাখির খাঁচায় একই অবস্থা বিরাজ করছে।
ইজারা নেওয়া চিড়িয়াখানার পরিচালনা আনিছুর রহমান জানান, কুমিল্লা জেলা পরিষদের এই চিড়িখানাটি চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ইজারা নিয়েছে। এর আগে মো. মাসুদ নামে এক ব্যক্তি চিড়িয়াখানাটি ইজারা নিয়ে পরিচালনা করেছিলেন।
আনিছুর রহমান আরও জানান, ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চিড়িয়াখানার পাশের বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ জেলা পরিষদ থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। জেলা পরিষদ কথা দিয়েছে, গার্ডেনের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, চিড়িয়াখানায় পশু-পাখিতে সমৃদ্ধসহ আরও উন্নয়ন কাজ করা হবে।
চিড়িয়াখানায় আসা স্থানীয় বাসিন্দা ঋষি দাস ও সাইফুল ইসলাম অন্তর জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত চিড়িয়াখানাটিতে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। দিন দিন পশু-পাখি শূণ্য হয়ে পড়ছে। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ও ইজাদারদের অবহেলায় দর্শনার্থীও হারাচ্ছে দিনের পর দিন। জেলা পরিষদ এর আগেও বহুবার ইজারা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভ করলেও চিড়িয়াখানার চাহিদা অনুসারে পশু-পাখি দেয়নি, নেই কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন।
কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, কুমিল্লা চিড়িয়াখানাটি সরকারের দেওয়া কোন চিড়িয়াখানা নয়। এটি কুমিল্লা জেলা পরিষদের জায়গায় ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রতিবছর জেলা পরিষদের ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। চিড়িয়াখানা এবং পশু-পাখিদের জন্য সরকারের কোন ব্যয় নেয়।
তিনি বলেন, সিংহ ও হরিণ মারা যাওয়ার পর জেলা পরিষদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে মেছো বাঘ ও চিতা বাঘের দুইটি বাচ্চা চিড়িয়াখানায় আনা হয়েছে। এদের শুকনো খাঁচায় পানির হাউজ বসানের ব্যবস্থা নেয়। তবে সিংহের খাঁচায় বাঘ দুইটিকে একসাথে রেখে পানির ব্যবস্থার প্রকৃয়া চলছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com