নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি প্রতিবন্ধী পরিবারের বসত ঘর ভেঙে বাড়ির সম্পত্তি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্পত্তি দখলের পর সেখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। অভিযোগ উঠেছে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি এবং একজন এসআই ওই দখলে সরাসরি সহযোগীতা করেছেন। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা এসব কথা মোটেও সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। দখলের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ঝলম উত্তর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আনু মিয়ার বাড়িতে। আনু মিয়ার তিন ছেলে বাক প্রতিবন্ধী।
আনু মিয়া, তার আরেক ছেলে মনির হোসেন এবং স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, আনু মিয়ার ভাই আবদুল গনি এবং গনির চার ছেলে কামাল হোসেন, আলমগীর হোসেন, দিদার হোসেন ও ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘদিন ধরে আনু মিয়ার বাড়ির সাত শতক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এনিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। গনির ছেলেরা বিভিন্ন সময় ওই সম্পত্তি থেকে গাছ-পালা কেটে নিয়েছে। গত ১৯ জুলাই আবদুল গনি এবং তার ছেলেরা আনু মিয়ার ছেলের বসত ঘর ভেঙে ওই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালায়। পরে সম্পত্তি রক্ষায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২২ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেন আনু মিয়া। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সম্পত্তিতে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখার জন্য মনোহরগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া সরেজমিনে তদন্তপূর্বক একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্যও ওসিকে নির্দেশনা প্রদান করেন আদালত।
আনু মিয়ার ছেলে মনির হোসেন অভিযোগ করেন, আদালতে দায়ের করা মামলাটি থানায় এলে প্রথমে মামলাটি তদন্তের জন্য এসআই আবদুস সালামকে নির্দেশ দেন মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মো.আনোয়ার হোসেন। পরে এসআই সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামীদের সম্পত্তি দখলের চেষ্টা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছু দিন পর এসআই সালাম পেশাগত দায়িত্ব পালনে কক্সবাজার গেলে থানার এসআই ইউনুস আলী মামলাটির তদন্তভার নেন। পরে তিনি এবং ওসি সাহেব আসামীদের সঙ্গে আতাঁত করে উল্টো আমাদের হয়রানি শুরু করেন। এক পর্যায়ে এসআই ইউনুস ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামীদের সম্পত্তি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অর্ডার দেন। তিনি আমাদের গালমন্দ করে হুমকি দিয়ে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিবেন। পরে আমরা নিরুপায় হয়ে ওসি সাহেবের কাছে গিয়েছি, কান্নাকাটি করেছি। তবে তিনি এর কোন প্রতিকার না করে এসআই ইউনুস এবং দখলকারীদের পক্ষ নিয়ে সম্পত্তি দখলে সহযোগীতা করেন। বর্তমানে পুলিশের সহযোগীতায় আসামীরা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমাদের সাত শতক সম্পত্তি দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে।
গতকাল দুপুরে এই প্রসঙ্গে জানতে মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে অপর অভিযুক্ত মনোহরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো.ইউনুস আলী কালের কন্ঠকে বলেন, অভিযোগকারীদের এসব কথা মোটেও সত্য না। কারন ওই সম্পত্তিতে আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আদালত তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে। আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছি। তবে আমার দেওয়া সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী আবেদন করেছে তারা। পরে আদালত বিষয়টি মনোহরগঞ্জ উপজেলার এসিল্যান্ডকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আমি এবং ওসি স্যার তাদের গালমন্দ করে হুমকি দিয়েছি এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।
এদিকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুল গনির ছেলে আলমগীর হোসেন ও ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পত্তিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছি। আমাদের আরো সম্পত্তি তাদের ভেতর আছে। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমাদের সামাজিকভাবে হেওপ্রতিপন্ন এবং হয়রানীর উদ্দেশ্যে তারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com