ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার পুরান গোমতী নদীর দুইপাড় ও পানির অংশের দুইশো শতকের বেশি জায়গায় অবৈধভাবে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ছোটবড় স্থাপনা, পরিবহন স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে পাঁচ শতাধিক দখলদার। প্রায় ৩৬ বছর ধরে এসব নদী খেকোরা গিলতে গিলতে পুরান গোমতী নদী সরু খালে পরিণত করেছে। সম্প্রতি নদ-নদী অবৈধ দখলমুক্ত করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ দেয়ার পর প্রসাশনের উদ্যোগে সারাদেশেই বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ নদী দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদাভিযান শুরুর পর কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক পুরান গোমতী নদী দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের নেতৃবৃন্দসহ সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রাচীন শহর কুমিল্লার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক পুরান গোমতী নদী। একসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রনে ছিল পুরান গোমতী নদী। বর্তমানে নদীটি দেখভালের দায়িত্ব কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী দখলে থাকা ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশের জন্য জেলা প্রশাসকদেরও নির্দেশনা দিয়েছেন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি অবৈধ দখলদারদের তালিকা জেলায় জেলায় প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি চলবে উচ্ছেদ অভিযান।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তালিকায় পুরান গোমতীর দুইপাড় ও পানির অংশ দখল করে রেখেছেন এমন ৫২২ জনের নাম রয়েছে। যারা এ নদীটির প্রায় দুই একর (দুইশো শতক) জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। ২০০৩ সাল থেকে অবৈধ দখলদারদের নদীর জায়গা ছেড়ে দিতে প্রশাসন থেকে অন্তত দশবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরান গোমতী নদীর দুই পাড়ের প্রায় দুইশো শতক জায়গা দখল হয়েছে। নদীর পানির অংশও দখল করে সেখানে বাড়িঘর, দোকানপাট, পরিবহন স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। অবৈধ এসব স্থাপনায় বৈধভাবে মিলেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ। নদীর উত্তর প্রান্তে শুভপুর এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে চকবাজার হয়ে টিক্কারচর শশ্মানঘাট পর্যন্ত পাড় দখলের সাথে নদীর অংশও দখলে চলে গেছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ও দক্ষিণ প্রান্তে চকবাজার, গর্জনখোলা অংশেও কমবেশি দখল হয়েছে। নদীর উত্তর প্রান্তে চাঁনপুর ফেরিঘাট অংশে পাড় ও পানির অংশ দখল হয়ে সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মোগলটুলি ফারুকি হাউজ রোডের পাড় দখল হয়ে পরিবহন স্ট্যান্ড ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে মোগলটুলি, ইসলামপুর, কাপ্তানবাজার এবং উত্তর প্রান্তে পশ্চিম চাঁনপুর ও গয়ামবাগিচা জুড়ে নদীর পাড় ও পানির অংশ দখল করে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সভাপতি প্রফেসর ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, অবৈধ দখলযজ্ঞ পুরান গোমতী নদীর ঐতিহ্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পুরান গোমতী নদীর সীমানা চিহ্নিত করার কার্যক্রম আগেই শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাবো দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছোদাভিযান শুরু করে নদীর স্বাভাবিক অবস্থান ফিরিয়ে আনার কাজটি যেনো দ্রæত শুরু হয় এবং এবার এটির বাস্তবায়ন দেখতে চায় কুমিল্লাবাসী।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com