ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মজির আহমদের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে দিনভর আটক রেখে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে তার সত্যতা মিলেছে। ধর্ষণের পর মজির আহমদ গত এক সাপ্তাহ বিভিন্ন ভাবে ওই ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
ডেইলিকুমিল্লানিউজ সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ধর্ষণের খবরটি প্রকাশিত হলে বিষয়টি সকলের নজরে আসে। এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক মজির আহমদ ও ধর্ষণে প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগে অপর এক নারির বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। লাকসাম থানা পুলিশ স্ব-প্রনোদিত হয়ে গত বুধবার রাতে এই মামলা রুজু করেন।
ঘটনাটি ধামা-চাপা দেয়ার জন্য অভিযুক্ত বিএনপির ওই সাবেক নেতা এখনো বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা তদবির চালাচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
মজির আহমদ প্রভাতী ইন্সুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান, লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র, ভাইয়া গ্রুপের পরিচালক, ভাইয়া অটো রাইস মিলের মালিক ও লাকসাম জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান।
মামলা সূত্রে জনা যায়, লালমাই উপজেলার পেরুল ইউনিয়নের কনকশ্রী গ্রামের গোলাপ হোসেনের ছেলে আফজাল হোসেনের ভাগ্নি সাথী আক্তার (২২)। তার বাড়ি লাকসাম পৌর এলাকার ডুরিয়া বিষ্ণপুর গ্রামে। ঘটনার প্রায় ১০/১২ দিন আগে সে মামার বাড়ি (ধর্ষিতা কিশোরীরর পাশের বাড়ি) বেড়াতে আসে।
গত বুধবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে সাথী ওই কিশোরীর বাড়ি যায়। ওই সময় সাথী জামা-কাপড় কেনার কথা বলে তাকে (কিশোরীকে) ফুসলিয়ে লাকসাম নিয়ে আসে এবং লাকসাম ষ্টেডিয়ামের পাশে অভিযুক্ত বিএনপির সাবেক নেতা মজির আহমদের পরিচালিত একটি অটো রাইসমিলের অফিস কাম বিশ্রাম কক্ষে নিয়ে যায়।
পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাথী ওই কিশোরীকে নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যায় এবং তাকে বাড়ির পেছনের একটি জায়গায় রেখে সটকে পড়ে। কিছুক্ষণ পর ওই কিশোরী হঠাৎ চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে তার মা ও বাড়ির আশ-পাশের লোকজন এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
এ সময় ওই কিশোরী মজির আহমদের বিরুদ্ধে তাকে জোর পূর্বক ধর্ষনের অভিযোগ আনে। এ ছাড়া, আফজাল হোসেনের ভাগ্নি সাথী আক্তারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার ওপর এমন পৈচাশিক নির্যাতনের বিস্তারিত ঘটনা তার স্বজনদের কাছে জানায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনা জানতে পেরে ওই কিশোরীর স্বজনেরা সাথীর মামা আফজাল হোসেনকে ঘটনা জানালে তিনি ঘটনার সুষ্ঠ সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আশংকাজনক অবস্থায় লাকসাম জেনারেল হসপিটালে ভর্তি করেন।
এ হসপিটালের চেয়াম্যানও হলেন, অভিযুক্ত ধর্ষক আলহাজ মজির আহমেদ। এদিকে ওই কিশোরীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে গত শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) ভর্তি করেন।
পরদিন আশংকাজনক অবস্থায় পুনঃরায় কুমিল্লা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তবে বর্তমানে ওই কিশোরী বা তার পরিবার কোথায় আছে কেউ বলতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাকসামের একাধিক ব্যক্তি জানান, সাবেক ওই জনপ্রতিনিধি ও বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও এমন একাধিক ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে মজির আহমদের মুঠোফোনে (০১৭১১-৭২০৯০৫) একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনোজ কুমার দে জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে এবং পুলিশের আভ্যন্তরীণ তদদন্তে ঘটনাটি জানার পর লাকসাম থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন স্ব-প্রণোদিত হয়ে মজির আহমদ এবং তাঁর সহযোগী সাথী আক্তারের বিরুদ্ধে এই মামলাটি রুজু করেন।
তিনি জানান, এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটোনাটি বর্নণা দিতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গত শুক্রবার সকালে ভাইয়া গ্রুপের মোস্তফা কামাল, পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম, ইউপি মেম্বার সাইদুল তিতু ও ধর্ষিতা ছাত্রীর পরিবারসহ স্বজনরা গোপনীয়ভাবে এক সমঝোতা বৈঠকে বসে। সেখানে ছাত্রীর পরিবারকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাইয়া গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, মেয়ের পরিবারকে ম্যানেজ করতে মজির সাহেব থেকে নগদ ১০ লক্ষ টাকা নিছে মোস্তফা সাহেব। কিন্তু পেরুলের চেয়ারম্যান সফিক, মেম্বার তিতু ও আওয়ামী লীগ নেতা ডালিমের সাথে কথা বলার পর তিনি সিদ্ধান্ত পরির্বতন করে মেয়ের পরিবারকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
লাকসামস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স নাম প্রকাশ না করে বলেন, মেয়েটির গোপনাঙ্গে ৬টি সেলাই করতে হয়েছে। তবে মেয়েটি আশংকামুক্ত।
ক্ষোভ ও ঘৃনা প্রকাশ করে ওই নার্স সাংবাদিকদের আরো বলেন, চাকরী রক্ষার্থে চেয়ারম্যানের পছন্দমত মনোরঞ্জনে বাধ্য এ হাসপাতালের নার্স ও আয়ারা। একজন ছাড়া সব নার্সরাই গোপনীয় বাসায় যাওয়া আসা করে। সুন্দরী মেয়েদের মা ডেকেও অনৈতিক সর্ম্পক গড়ে তোলার নজির রয়েছে। পেরুলের নাতনী ও সালেহা আপার কথা লাকসামের সাবাই জানে। এতোকিছুর পরেও তিনি ছোট্ট মেয়েটিকে কিভাবে নষ্ট করলো?
মেয়ের বাবা মনির হোসেন বলেন, আমগো মেম্বার বলেছে কাউকে কিছু না বলতে। আমরা ১০ লক্ষ টাকা চাইছি, কিন্তু তিতু মেম্বার বলেছে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায় মেনে যেতে। তবে আমার নাবালিকা মেয়ের জীবন যে নষ্ট করেছে তার বিচার পরকালে হলেও হবে।
সে সময় এএসপি লাকসাম সার্কেল নাজমুল হাসান সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারা ভিকটিমকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে, পুলিশ সম্ভাব্য সকল স্থানে ভিকটিমকে উদ্ধার করার জন্য অভিযান চালায়, ওই ইউপির চেয়ারম্যান, মেম্বার, ভিকটিমের পরিবার বিষয়টি নিয়ে মূখ খুলতেছেনা। ভিকটিমকে উদ্ধার করা গেলে বিস্তারিত জানা যাবে, ভিকটিমকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com