ডেস্ক রিপোর্টঃ ভারতের সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুর আন্তর্জাতিক স্থল বন্দরকে ব্যবহার করে ভারতীয় অান্ত:দেশীয় জলপথে যুক্ত হবে ত্রিপুরা। এই স্থল বন্দরেই অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হবে নদী বন্দরের টার্মিনাল।
কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রনালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল প্রস্তাবিত নদী বন্দর এলাকা পরিদর্শন করার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়। নদী বন্দর চালু হওয়ার প্রয়োজনে তার সম্প্রসারণ হবে।
গোমতী নদীর বাংলাদেশের অংশ কী অবস্থায় আছে, কোথাও খননের প্রয়োজন আছে কীনা তা খতিয়ে দেখতে ভারতীয় অান্ত:দেশীয় জলপথ কর্তৃপক্ষের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশে যাবে আগামী মাসে । তারপরেই অান্ত:দেশীয় জলপথের প্রটোকলে যুক্ত হবে ত্রিপুরার গোমতী নদী। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জলপথকে ব্যবহার করে কলকাতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে সোনামুড়া। আসাম আগরতলা জাতীয় সড়ক চালু হওয়ার আগে ত্রিপুরার লাইফ লাইন ছিল গোমতী নদী।
রাজ্যের রাজধানীও তখন ছিল গোমতী নদী কেন্দ্রীক। রাজধানী স্থানান্তরের পরেই রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুত্ব কমতে থাকে এই নদীর। গেল শত বছর ধরে সড়ক পথ, বিমান পথ এবং রেল পথের উন্নয়নের পরও যে একেবারে হারিয়ে যায়নি গোমতী নদীর গুরত্ব তা প্রমান হচ্ছে ক্রমশ। তিন দিকে আন্তর্জাতিক সীমা রেখা বেষ্টিত ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে সড়ক, রেল এবং বিমান পথ সর্বদা সহায়ক নয়, তা রাজ্যবাসী টের পাচ্ছে হাড়ে হাড়ে । তাই বাধ্যে হয়েই শতবৎসর পুর্বের লাইফ লাইনকে সচল করার পথে পা বাড়ায় রাজ্য সরকার।
গত উনত্রিশ অক্টোবর রাজ্য সফরে আসেন কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রণালয়ের সচিব। উদ্দেশ্য মহারানী ব্যরেজ পরিদর্শন। সেই দিন প্রকাশিত নর্থ ইষ্ট কলার পত্রিকায় প্রকাশিত সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুর স্থল বন্দরের অচলাবস্তা এবং তৎকালীন বানণজ্য মন্ত্রীর দেওয়া গোমতী নদী বন্দর কেন্দ্রীক একটি প্রতিশ্রুতিকে নিয়ে একটি সংবাদ তার দৃষ্টির গোচরে আসে। তখন সফর সূচি পরিবর্তন করে সিপাহীজলা জেলা শাসক এবং সোনামুড়ার মহকুমা শাসককে নিয়ে তিনি চলে আসেন সোনামুড়ার শ্রীমন্তপুর স্থল বন্দরে। জায়গাটি পরিদর্শন করার পর ফেরার পথে রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নদী বন্দরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
রাজ্য সরকারের ইতিবাচক ইতিবাচক সাড়া পেয়ে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ির কাছে জলপথে ত্রিপুরাকে যুক্ত বিষয়টিও উথাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এখানেও ইতিবাচক সাড়া পান মুখ্যমন্ত্রী। নৌপথে ত্রিপুরাকে ভারতীয় অান্ত:দেশীয় জলপথে যুক্ত করার প্রকল্প বাস্তবায়ীত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় জাহাজ সচিব শ্রীমন্তপুর আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর পরিদর্শন করার দুমাসের মধ্যেই বুধবার উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সোনামুড়ায় আসে। প্রতিনিধি দলটি আজ পরিদর্শন করে শ্রীমন্তপুর আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর এলাকার গোমতী নদী। জাতীয় জল সম্পদ দপ্তর, রাজ্যের বন্যা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর, মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেন গোমতী নদীর গতি প্রকৃতি নিয়ে। আলোচনা করেন নাব্যতা নিয়েও।
একটি নৌবন্দর ও টার্মিনাল গড়ে তোলার জমি খুঁজতে গিয়ে দুর্গাপুরকে প্রধান্য দেওয়া হলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সড়ক পথ। পরে দুর্গাপুর থেকে সোনামুড়া আগরতলা ভায়া বক্সনগর সড়ক পর্যন্ত দেড় কিমি দৈর্ঘ্যের জাতীয় মানের একটি সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া প্রতিনিধি দলকে। মসজিদ , মাদ্রাসা এবং বাড়ি ঘরের কারণে শ্রীমন্তপুরেও নদী বন্দর গঠনের জমি খুঁজে পায়নি কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল। পরে সিদ্ধান্ত হয় আপাদত শ্রীমন্তপুর স্থল বন্দরকে ব্যবহার করেই অান্ত:দেশীয় জলপথে যুক্ত হবে ত্রিপুরা।
এখানে যে ওয়্যার হাউস রয়েছে এবং গুদামঘর রয়েছে তা ব্যবহারের জন্য শুল্ক দপ্তরের অনুমতি নিয়েই আপাদত সোনামুড়া নদী বন্দর চালু করা হবে। কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের প্রধান কেপি খারে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় অান্ত:দেশীয় জলপথের আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে। তাতে কলকাতার সঙ্গে গোহাটি এবং করিমগঞ্জ যুক্ত। এখন ত্রিপুরা্র সোনামুড়াকে যুক্ত করার আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে। আগামী মাসে একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশে গিয়ে দেখবে গোমতী নদী কী অবস্থায় আছে।
যদি খননের প্রয়োজন হয় তাহলে তা খনন করবে ভারত সরকার। কবে নাগাদ সোনামুড়ায় জাহাজ আসবে বলে প্রশ্ন করা হলে এব্যাপারে সঠিকভাবে কোন কিছু বলতে পারেননি কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রনালয়ের ( অান্ত:দেশীয় জলপথ) বিভাগের যুগ্ম অধিকর্তা রবীন্দ্র কুমার সিং। তিনি বলেন মাত্র পরিদর্শন শুরু হয়েছে। নদীর গতিপথ দেখতে হবে। দুই দেশের চুক্তি হবে। তার পরেই ত্রিপুরা যুক্ত হবে ভারতীয় অান্ত:দেশীয় জলপথের সঙ্গে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com