মো.জাকির হোসেনঃ রাতে দিনে সমানে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অপরাধীর পেছনে ছোটা, মাদক কারবারীদের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা, কোথাও কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা তা রিপোর্ট করা আর এভাবেই কখন যে রাত পেরিয়ে ভোর হয় আবার দুপুর গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায় তা টের পাওয়া কষ্টকর। এভাবে বিশ্রামহীন অথবা আধা বিশ্রামের শরীরে মন মেজাজ সব সময় ঠিক রাখা সম্ভব হয় না বলে অনেক সময় অনেকে পুলিশকে বেরসিক বলে,অমানবিক বলে। কিন্তু দায়িত্ব পালনে পোষাকের মধ্যে ঢেকে থাকা শরীরের ভিতরেও যে মানবিকতা আছে, আছে মানুষের শান্তির জন্য বিনিদ্র রজনী পার করার মানসিকতা তা আগে বহুবার প্রমানিত হয়েছে। গতকাল রাতেও আবারো পুলিশের মানবিকতার অন্যন্যা এক উদাহারন হয়ে রইলো।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ি। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং কুমিল্লা- সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের সীমানায় পুলিশ ফাঁড়িটি। এলাকটি জনবহুল হওয়ায় অপরাধীদের আনাগোনা বেশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিয়ম করে পুলিশের একটি টহল দল দেবপুর ফাঁড়ির এস আই মোহাম্মদ শাহিন কাদিরের নেতৃত্বে উপজেলার আবিদপুর এলাকায়। গত বেশ কয়েক মাস ধরে মাদকসেবী আর মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য মূর্তিমান আতংক হয়ে আছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত তিনটায় রুটিন টহলের সময় দেখা যায় বিক্ষিপ্তভাবে একটি শিশু ঘুরাফেরা করছে। টহল পুলিশের সদস্যরা বিষয়টি এস আই শাহিন কাদেরকে জানান। পরে শাহিন কাদের শিশুটির সাথে কথা বলে জানতে পারেন শিশুটির নাম রিফাত,বয়স ৭।
একটি মাদ্রাসাতে পড়লেও মাদ্রাসার এবং তার বাবা মায়ের নাম বলতে পারেনি শিশুটি। কিন্তু হাল ছাড়েন নি পুলিশ কর্মকর্তা শাহিন কাদির। টানা দু'ঘন্টা শিশুটিকে নিয়ে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে খুঁজে পায় রিফাতের বাবাকে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের আবিদপুর তিন রাস্তার মাথায় ৫ মার্চ মঙ্গলবার গভীর রাতে রিফাতকে দেখতে পায়। রিফাতের বাবা মানিক মিয়া সাংবাদিকদের জানান, কিছু দিন আগে তার শিশু পুত্র রিফাতকে আবিদপুর এলাকার জামাল কাজি বাড়ি হাফিজিয়া নুরানী মাদরাসায় ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করান । মাদরাসা কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালীর কারণে হয়তো তার শিশুটি মাদরাসা থেকে রাতের কোন এক সময় বেরিয়ে পড়ে । এরপর হয়তো পথ ভূলে সে আর মাদরাসায় ফিরতে পারেনি। বিষয়টি জানতে মাদরাসা সুপারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন। মানিক মিয়া তার শিশুটিকে উদ্ধার করে দেয়ায় এসআই শাহিন কাদিরসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান শিশুটির পরিবার।
এসআই শাহিন কাদির জানান, আমরা রাত জাগি মানুষ যেন নিরাপদে ঘুমাতে পারে। আর সরকারি নিদির্ষ্ট দায়িত্বের পরেও আমাদের পুলিশ সদস্যদের যে একটা মানবিক মন আছে আমাদেরও যে স্ত্রী সন্তান আছে তা দায়িত্বরত অবস্থায় খুব ভালো করে অনুভব করি। গতকাল রাতে যখন অবুজ রিফাতকে গভীর রাতে বিষন্ন মনে ঘুরাফেরা করতে দেখি তখন আৎকে উঠি। সন্তান হারানো বাবা মায়ের যে কি অবস্থা। তারপর আমার টহল সদস্যদের নিয়ে দীর্ঘ ২ ঘন্টা পরে রিফাতকে তার বাবার হাতে তুলে দিতে পেরেছি তখন এক অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করেছে মনে যা বলে বুঝানো সম্ভব না।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com