নিজস্ব প্রতিবেদকঃ লাকসামে গ্রামীণ সড়কের চলাচলকারী জনসাধারণ অবৈধ ট্রাক্টরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। উপজেলার আ লিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে অবাধে ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টর। চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে গ্রামীণ জনপদে সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করেছে। বিরামহীন চলাচলে শব্দ দুষণেও আশপাশের গ্রামের মানুষ, রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কৃষি উন্নয়নের জন্য এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট, বালু, মাটি, ফার্নিচার, ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। রাস্তায় এরা উচ্চ শব্দে হর্ণ বজিয়ে বেহাল অবস্থায় চলাচল করছে। এসব অবৈধ যন্ত্রদানবের প্রতি নজর নেই প্রশাসনেরও।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ এবং পুকুর-দীঘিনালা ভরাট চলছে। ট্রাক্টরের অত্যাচারের মুখে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। রোড পারমিশন বিহীন ট্রাক্টর ও সনদ বিহীন ড্রাইভারদের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলাচলকারী মানুষ সার্বক্ষনিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। বিকট শব্দে মাটি বোঝাই নিয়ে সাদা পাউডারের মত ধুলো উড়িয়ে ধাবিয়ে চলছে এরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি থেকে মাটি বোঝাই নিয়ে মহাসড়ক, আ লিক মহাসড়ক ও গ্রাামীণ সড়ক গুলোর উপর দিয়ে ব্যাপক হারে চলাচল করছে। বিশেষ করে কুমিল্লা-নোয়াখালী আ লিক মহাসড়ক, লাকসাম-চৌদ্দগ্রাম সড়ক, লাকসাম-যুক্তিখোলা সড়ক সহ উপজেলার প্রত্যেক সংযুক্ত সড়কগুলোতেই দিনরাত ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ পরিবহন।
এসব অবৈধ ট্রাক্টরগুলো সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত কৃষি জমি থেকে মাটি বোঝাই করে বিভিন্ন ইট ভাটায় এবং পুকুর-দীঘি-নালা ভরাটের কাজ করছে। তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
লাকসাম উম্মুলকেবারা মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান, এ মাদ্রাসায় প্রতিদিন গুন্তি, নোয়াপাড়া, সাকেরা, এলাইচ থেকে শতশত শিক্ষার্থী চলাচল করে। উম্মুলক্বোরা মাদ্রাসায় চলাচলের একটি মাত্র প্রধান রাস্তা এটি। যা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। এসব অবৈধ ট্রাক্টর মাটি নিয়ে বেপরোয়া অবস্থায় চলাচল করে রাস্তায়। পৌর শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা এ রাস্তায় চলাচল করতে ভয়ে থাকে। অনেক অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠাতে ভয়ও পাচ্ছে।
এলাইচ গ্রামের দৌলতগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়ার অভিভাবক আইরিন জাহান বলেন, উন্নত শিক্ষার জন্য আমরা গ্রামীণ অ লের অভিভাবকরা লাকসাম শহরে সন্তানদের পড়া লেখা করাচ্ছি। কিন্তু লাকসাম-এলাইচ সড়কে দীর্ঘদিন যাবত প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রাক্টর মাটি নিয়ে ভীতি স ার করে চলাচল করছে। উচ্চ শব্দে হর্ণ বাঝিয়ে বুলেট গতিতে চলছে এসব পরিবহন। এসব দানব পরিবহনের ভয়ে সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠায় পড়ে থাকি। প্রশাসন যদি এতে নজর না দেয় তা হলে যেকোন সময় যে কারো পরিবারে নামতে পারে আহাজারী।
পথচারী ডাঃ মোঃ মকবুল হোসেন জানান, সূর্যের আলো থাকার পরও রাস্তার আশপাশ এলাকায় কুয়াশার মতো ট্রাক্টরের সৃষ্ঠ ধুলোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর ধুলোর মধ্যে দিয়ে চলাচল করায় সর্দি কাশি শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষেরা। অতি দ্রুত মানুষের জীবন অতিষ্ঠকারী এসব যন্ত্রদানব প্রতিরোধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
লাকসাম উপজেলা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর আহবায়ক মোজাম্মেল হক আলম বলেন, এসব অবৈধ ট্রাক্টরগুলো গ্রামীন পাকা এবং কাচাঁ রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি করছে। আবার চরম ভাবে পরিবেশও দুষিত করছে। গ্রামীণ অ লের মানুষ এখন উন্নত বাংলাদেশের অংশিদার হতে উচ্চ শিক্ষায় শহরমূখী হচ্ছে। এসব অবৈধ যন্ত্রদানবগুলো রাস্তায় ধাবিয়ে বেড়ালে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদের জীবন প্রদীপে আঘাত আসতে পারে যেকোন সময়। রোগবালাই অকালেই বাসা বাধবে শরীরে। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
তবে এলাকাবাসীরা সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের কাছে ট্রাক্টর বন্ধের দাবী করে বলেন, আমরা বুঝতে পারি না, ট্রাক্টর চলাচল বন্ধের কাজটি কেন এতো কঠিন। ট্রাক্টর চলাচলে যাদের স্বার্থরক্ষা হয়, তারা কি অকাল ও অস্বাভাবিক মৃত্যুরোধে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ আদালত নিজের বিবেকের রায়ে সেই স্বার্থ জলাঞ্জলির কথা মোটেও ভাবতে পারেন না?
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com