ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লায় গণপরিবহনে ভোগান্তির আরেক নাম কুমিল্লা-কুটি সড়কে চলাচলকারী সুগন্ধা পরিবহন। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কুমিল্লা থেকে কুটি পর্যন্ত সুগন্ধা পরিবহনের প্রায় ৭০টি বাস নিয়মিত চলাচল করছে। এ গণপরিবহনের বিরুদ্ধে যাত্রীসাধারণের অভিযোগের অন্ত নেই। লক্কড়-ঝক্কড় বাস, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ, ফিটনেস ও মডেলবিহীন যানবাহনে ন্যায্য ভাড়া আদায়, বিরতিহীন বাসের ভাড়া নিয়ে লোকাল যাত্রী বহন, সিটে বসিয়ে এবং দাঁড় করিয়ে একই হারে ভাড়া আদায়, আসন সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী বহনসহ অসংখ্য অভিযোগ এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের।
এদিকে দীর্ঘ বছরেও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নসহ আধুনিক বাস সংযোজন না করায় এ পরিবহনের বিরুদ্ধে যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কুমিল্লা থেকে কোম্পানীগঞ্জ-কুটি পর্যন্ত বেশকিছু যানবাহন থাকলেও বড় আকারের বাস হিসেবে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ সুগন্ধা পরিবহন বাস। প্রতিষ্ঠার শুরুতে এ গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ ভালোমানের সেবা এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রেখে যাত্রীদের সন্তুষ্ট করেছিলেন। বর্তমানে এ গণপরিবহনটির বিরুদ্ধে যাত্রীসাধারণের অভিযোগ পাহাড়সম। এ পরিবহনের অধিকাংশ যানবাহনের মডেল নেই। ফিটনেসও নেই বেশকিছু যানবাহনের। সম্প্রতি কয়েকটি ভালোমানের বাস এ পরিবহনে সংযোজন করা হলেও কমেনি যাত্রীদের ভোগান্তি। এ যানবাহনের বেশকিছু চালক ও স্টাফ মাদকাসক্ত। অভিযোগ রয়েছে সুগন্ধা পরিবহনে দাঁড়িয়ে থেকে এবং সিটে বসে একই হারে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। সবক’টি বাসই আসনের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন করে। আসন পূরণের পর দাঁড়িয়ে থাকলেও আরও বেশি যাত্রীর জন্য বাস রাস্তায় থামিয়ে রাখা হয়। কুমিল্লা থেকে কোম্পানীগঞ্জ-কুটি পর্যন্ত বিকল্প বড় বাস না থাকায় বাধ্য হয়েই যাত্রীরা সুগন্ধা পরিবহনে চলাচল করছেন। আর এ সুযোগে এ পরিবহনের মালিকরা যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পাশ কাটিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ন্যায্য ভাড়া আদায় করছেন। এতে দিন দিন এ সড়কের যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ছে।
এছাড়া এ সড়কে চলাচলকারী সবক’টি বাস-মিনিবাসের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ যাত্রীসাধারণের। এদিকে জেলার দোল্লাহ-নবাবপুর-হোমনা-বুড়িচং-বি-পাড়া-বরুড়া-লাকসাম-চৌদ্দগ্রামসহ জেলার অভ্যন্তরে চলাচলকারী সবক’টি লোকাল সার্ভিস একই কায়দায় যাত্রীদের জিম্মি করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। যাত্রীসেবার নামে পরিবহন মালিকরা যাত্রী হয়রানি ও ভোগান্তি দিচ্ছে। গণপরিবহন সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীদের হয়রানিসহ নানা অনিয়ম নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশ-প্রশাসনসহ বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও কুমিল্লায় এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তাই দিন দিন এসব নৈরাজ্য বেড়েই চলছে। সুগন্ধা পরিহনের যাত্রী জালাল আহাম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, প্রতিনিয়তই এ পরিবহনটি অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করে সিটে বসিয়ে এবং দাঁড় করিয়ে একই হারে ভাড়া আদায় করছে। বিরতিহীনের ভাড়া আদায় করলেও সব স্টেশনে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে।
সুগন্ধা পরিবহন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মিয়া বলেন, আমরা যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন বেশকিছু বাস সংযোজনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য চালক ও হেলপারদের নিয়মিত কাউন্সিলিং করছি। যেসব চালক-হেলপার মাদকাসক্ত তাদের চাকরিচ্যুত করেছি এবং বেশ কয়েকজনকে মাদক নিরাময় সেন্টারে চিকিৎসা প্রদান করছি। তিনি বলেন, আমরা দাঁড় করিয়ে কোনো যাত্রী বহন করতে চাই না। যাত্রীরাই দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য বাসে উঠে পড়ছেন। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী সব ধরনের ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এছাড়া কোনো গণপরিবহন যদি অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্রঃ যুগান্তর
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com