ডেস্ক রিপোর্টঃ নির্দিষ্ট এক শিক্ষার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চলমান যোগ্যতা ও স্বাভাবিক নিয়মকে পাশ কাটিয়ে আবেদনের শর্ত শিথিল করতে মরিয়া হয়ে উঠার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত লোকপ্রশাসন বিভাগের ৭ম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদানের চেষ্টা হিসেবে এমনটি করা হচ্ছে বলে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়।
শিক্ষক নিয়োগের চলমান শর্ত পরিবর্তনে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির ও প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালটির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগসমূহে প্রভাষক পদে আবেদন করতে হলে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে নূন্যতম সিজিপিএ ৩.৬০ (৪ এর মধ্যে) থাকতে হয়। তবে ঐ শিক্ষার্থীর স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির সিজিপিএ ৩.৬০ এর নিচে হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অনুষদে প্রভাষক পদে আবেদনের ক্ষেত্রে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের সিজিপিএ হ্রাস করার চেষ্টা চলছে। তবে আবেদনের যোগ্যতা পরিবর্তনের কিংবা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট রীতি থাকলেও তা অনুসরণ না করে অনেকটা পাশ কাটিয়ে শর্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক ও একাডেমকি দায়িত্বে ছিলেন বা এখনও রয়েছেন এমন প্রায় ১০ জন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোন বিভাগের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়াবলীতে শর্ত নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিভাগ ভিত্তিক প্লানিং কমিটি থাকে। এই প্লানিং কমিটি নিয়োগের শর্তসহ শিক্ষক চাহিদা ও পদোন্নতির বিষয় নির্ধারণ করে তা অনুষদের নির্বাহী পরিষদে প্রেরণ করে। অনুষদের ডিনের সভাপতিত্বে অনুষদের নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের (অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহের প্রধান) সঙ্গে বিষয়টি আলোচনার পর চূড়ান্ত করা হয়। পরে ডিন বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করেন। কাউন্সিল বিষয়টিতে সম্মতি দিলে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সিন্ডিকেটে প্রেরণ করা হয়।
তবে লোকপ্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিতে শর্ত শিথিলের জন্য বিপরীত পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। জানা যায়, বিভাগের প্লানিং কমিটি, অনুষদের নির্বাহী পরিষদ ও একাডেমিক কাউন্সিলকে পাশ কাটিয়ে ঐ অনুষদে প্রভাষক পদে আবেদনের শর্ত শিথিলের বিষয়টি সরাসরি গেল বছরের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৭০ তম সিন্ডিকেট সভার আলোচ্যসূচীতে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। পরে একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের কুবি/রেজি/সিন্ডি/স.সি/বাস্ত/২০৪/২০০৯/১৬৯১ এই স্মারকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুদা কামালকে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। যার বিষয়বস্তু ছিলো, সিন্ডিকেট সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রভাষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সিজিপিএ ৩.৬০ থেকে কমিয়ে ৩.৫০ করার ব্যাপারে আলোচনা হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য অনুষদকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়।
নির্দিষ্ট ঐ শিক্ষার্থীকে শিক্ষক নিয়োগ করতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী স্বয়ং মরিয়া হয়েছেন যার স্নাতকোত্তরের ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি। প্রশাসন এমন কার্যক্রম করছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান। কাকে আগামী নিয়োগে ঐ বিভাগের শিক্ষক করা হচ্ছে এমনটি প্রতিনিয়তই ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জনের মতই চাউর হয়েছে।
নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোকে পাশা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর অনুষদের ডিন সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণে অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহের প্রধানদের নিয়ে আলোচনায়ও বসেছিলেন বলেও জানা যায়। অনেক শিক্ষক বিষয়টির বিরোধিতা করলেও তা শেষ পর্যন্ত টিকেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষক নিয়োগ পক্রিয়াকে স্বচ্ছ এবং যর্থাথ রাখা এবং চলমান রীতিকে পাশ কাটিয়ে আবেদনের যোগ্যতা কমানো হলে বিষয়টি যে, কোন নির্দিষ্ট প্রার্থীর জন্য করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য তার সহকর্মী হওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, ‘এমন একটি চিঠি আমার কাছে এসেছিল। আমি বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে সভা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমনটি চিঠিতে বলেছিল তেমনটি করতে বিভাগগুলোর প্লানিং কমিটি কাজ করে অনুষদের নির্বাহী পরিষদের পাঠাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, ‘প্রচলিত রীতি ভেঙ্গে সিন্ডিকেট এমন করতে পারলেও তা হীন স্বার্থে করা হচ্ছে এটা পরিষ্কার। এটা শুধু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নয় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই এটা হওয়া উচিত।’
নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীকে নিয়োগ প্রদানের জন্য শর্ত শিথিলের করা হচ্ছে কিনা এমনটি জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘নির্দিষ্ট কাউকে নিয়োগ দিতে এটা করার প্রশ্নেই আসে না। অনুষদের কিছু শিক্ষক এমন মতামত দিয়েছিলেন বলে সিন্ডিকেট এমন প্রস্তাব অনুষদকে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে ইউজিসি’র অভিন্ন নীতিমালা অনুযায়ী তো ৩.৫০ শিক্ষক নিয়োগের শর্ত রয়েছে।’ ইউজিসি’র অভিন্ন নীতিমালা তো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন করা হয়নি বা এমনটি হলেও কেন শুধু সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে এমন চিঠি পাঠানো হলো এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘এটা ইউজিসি’র অভিন্ন নীতিমালার জন্য করা হচ্ছে। তবে এটা তো চূড়ান্ত করা হয়নি। শুধু মাত্র মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছে।’ নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীকে নিয়োগের জন্য এমনটি করা হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একদমই ঠিক নয়। কোন নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর জন্য এমন করা হচ্ছে না। বর্তমানে যে শর্ত আছে তাতে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই আবেদন করতে পারছেন না বলেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে।’
সূত্রঃ একুশে টিভি
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com