ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালে জেলা পুলিশ ও পুলিশ বিভাগের যথেষ্ট বদনাম করে গেছেন দেশব্যাপী সমালোচিত ওসি মোয়াজ্জেম। জানা যায়, কুমিল্লা ডিবি ও মুরাদনগরের থানা দুটিতে দায়িত্ব পালনকালে নিজস্ব তৈরি করা আইন প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে গেছেন ওসি মোয়াজ্জেম।
ফেনীর সোনাগাজী থানায় যোগদানের আগে ওসি মোয়াজ্জেম কুমিল্লায় প্রায় ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমে কুমিল্লা ডিবিতে ওসি হিসেবে যোগদান করেন। পরে কুমিল্লা মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসি ছিলেন তিনি। থানা দুটিতে জন্ম দিয়ে গেছেন নানা ধরনের অপকর্মের।
মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- যাকে তাকে ধরে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের, যে কোন মামলার অজ্ঞাত হিসেবে আটক, পরিবহনে চাঁদাবাজি ও টোকেন বাণিজ্য, বাঙ্গরা ও মুরাদনগরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানান কৌশলে টাকা আদায় এবং থানাগুলোকে তিনি নিজস্ব বিচারালয় বানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
হয়রানির কারণে দুই থানার অনেক ব্যবসায়ী পথে বসেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে। তবে মধুর সখ্যতা ছিল চোরাকারবারিদের সাথে। নিয়মিত মাসোহারা নিতেন তিনি, ওই সময় মুরাদনগর এলাকা মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
কুমিল্লা সদর, মুরাদনগর ও বাঙ্গরা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন হয়রানির কথা উল্লেখ করে ক্ষোভের সাথে বলেন, আল্লাহ তার বিচার করেছেন। মুরাদনগরের এক ব্যবসায়ী ওসি মোয়াজ্জেমের ভয়ে এলাকা ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান।
২০১১ সালের ২৪ জুলাই ওসি মোয়াজ্জেম কুমিল্লা মুরাদনগর থানায় যোগদান করেন, ২০১২ সালের মে মাসে যোগ দেন কুমিল্লা ডিবির ওসি হিসেবে ও ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে তিনি কুমিল্লা বঙ্গরা থানায় যোগ দেন।
জানা গেছে ২০১১ সালে কুমিল্লা মুরাদনগর থানায় ওসি পদে যোগ দিয়েই বিভিন্ন মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে ধরপাকড় শুরু করেন। আটককৃতদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ওই সময় আটক বাণিজ্য নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল মুরাদনগর এলাকায়। তখন মানুষকে হয়রানির অভিযোগে মোয়াজ্জেমকে মুরাদনগর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও জোর তদবির করে ২০১৬ সালে সে আবার ফিরে আসেন মুরাদনগর উপজেলায়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে- বাঙ্গরা থানার দুজন এএসআইকে দিয়ে সাধারণ মানুষ ও পথচারীদের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে তাদের মাদক কারবারি বানিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের ছাড়া হতো। মানুষকে শুধু মাদক দিয়ে হয়রানিই নয়, জাল টাকা দিয়েও হয়রানি করতেন ওসি মোয়াজ্জেম ও তার অনুগত পুলিশ সদস্যরা। এমন একটি ঘটনায় হায়দ্রাবাদ বাজারের ব্যবসায়ী সোহেলের দোকানে জাল টাকার বান্ডিল রেখে তাকে গ্রেপ্তার করতে যায় পুলিশ। তবে সেবার ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের মুখে ব্যর্থ হয় পুলিশ।
মুরাদনগর ও বাঙ্গরা বাজারের বনেদি ব্যবসায়ীদের হয়রানি চরম আকার ধারণ করে। যখন-তখন ব্যবসায়ীদের ধরে থানায় নিয়ে আসত মোয়াজ্জেম। ছাড়া হতো মোটা টাকার বিনিময়ে। দুই থানার পরিবহন ব্যবসায়ীরাও চরম হয়রানির শিকার হন। বাঙ্গরা বাজার থানায় চলাচল করা সব গাড়িকে থানা থেকে টোকেন নিয়ে চলাচল করতে হতো। আশপাশের অন্যান্য থানা বিশেষ করে মুরাদনগর, নবীনগর ও দেবীদ্বার থানার গাড়ি বাঙ্গরা থানা এলাকায় পেলে আটক করা হতো। টাকার বিনিময়ে সেই গাড়িগুলো ছাড়া হতো থানা থেকে।
২০১৫ সালে নতুন গঠিত কুমিল্লা বাঙ্গরা বাজার থানায় যোগ দেন। যোগ দিয়েই মুরাদনগর থানার মতো পুরোনো কায়দায় আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন ওসি মোয়াজ্জেম। সেখানেও অসহায় মানুষদের টার্গেট করে সে। মিথ্যা মামলা ও আটক বাণিজ্যে সিদ্ধহস্ত মোয়াজ্জেম অবৈধ এমন কোন কায়দা নেই যা প্রয়োগ করেন নাই। ওই সময় আকুবপুর ইউনিয়নের বলিগর গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ওসি মোয়াজ্জেম ৬৪ টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি অধ্যক্ষের হাতে কীভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন, এর বিবরণ ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়ম ভেঙে তার মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন। তার বক্তব্য নেওয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।
ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রোববার ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্রঃ দেশ রুপান্তর
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com