ডেইলিকুমিল্লানিউজ ডেস্কঃ কুমিল্লার সবচেয়ে বড় উপজেলা মুরাদনগর। প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে খ্যাত মুরাদনগর উপজেলার দুইটি থানা এলাকার ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৩ সংসদীয় আসন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। আওয়ামী লীগের তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কয়েকজন মাঠে আছেন, কয়েকজন কেন্দ্রে লবিংয়ে ব্যস্ত। তবে মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক, আসনটি পুনরুদ্ধারই দলের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন নেতারা।
১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডা. ওয়ালী আহাম্মদের পর জয়ের মুখ দেখেনি দলটি। ১৯৭৯ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বারবার প্রার্থী বদল করেও মুরাদনগরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি আওয়ামীলীগ। কারণ দলীয় কোন্দল। ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হোন মুরাদনগর আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে ড. কিশোর আলম সরকার। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের সঙ্গে। ইউসুফ হারুন স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়ে আলোচিত-সমালোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয় পান। সম্প্রতি তিনি যোগদান করেছেন আওয়ামীলীগে। ফলে মুরাদনগর আওয়ামীলীগে জাহাঙ্গীর সরকার ও ইউসুফ হারুনের মধ্যে নেতৃত্বের আধিপত্য ও দ্বন্ধ আরো একধাপ জায়গা করে নিয়েছে। আর আওয়ামীলীগের এ দ্বন্ধে আসন্ন একাদশ নির্বাচনেও সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের নেতারা প্রতিদিনই মুরাদনগর উপজেলার কোথাও না কোথাও সভা-সমাবেশ করে ভোটার এবং কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। বিএনপি এ মুহূর্তে আন্দোলনের মাঠে, নির্বাচনী কার্যক্রম তেমনটি নেই। গ্রুপিং ও বিরোধের কারণে দুই দলের নেতাকর্মীরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে আছেন।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান এমপি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুুল কাইয়ুম খসরু।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি। মামলায় সাজা হওয়ার কারণে নির্বাচন করতে না পারলে তার পরিবারের কেউ নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে দলেরও সায় আছে।
কায়কোবাদ নির্বাচন করতে না পারলে সাবেক মন্ত্রী ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া নির্বাচন করতে চান।
যদিও ঢাকার একটি আসন থেকে তিনি ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন। রফিকুল ইসলাম মিয়ার নির্বাচনী আসন মুরাদনগর। এ ছাড়া যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ গোলাম কিবরিয়া সরকার ও শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কাজী আমীর খসরু মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা একরামুল হক বিপ্লবও মনোনয়ন চান। তবে তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। এ ছাড়া ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী শাহিদা রফিকও এ আসন থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
মনোনয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে আলহাজ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এ উপজেলায় একটিও মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করা হয়নি। কোনো কাজের জন্য কাউকে ১০টি টাকাও চাঁদা দিতে হয়নি। আরেকবার এমপি নির্বাচিত হতে পারলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করে মুরাদনগরকে একটি মডেল উপজেলায় রূপান্তরিত করতে পাবর। আশা করি, আগামী নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমার কাজের মূল্যায়ন ও জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে বিগত ২৭ বছর ধরে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে উত্তরাংশের সাত উপজেলাকে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলেছি। নেত্রীর নির্দেশে সময়ের প্রয়োজনে কখনো মুরাদনগর, কখনো হোমনায় নির্বাচন করতে হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে আমি নৌকা প্রতীক মনোনয়ন পাব ইনশাল্লাহ।
উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুুল কাইয়ুম খসরু বলেন, দল আমাকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এ আসনটি উপহার দিতে পারব বলে আমি আশাবাদী।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবুল হক বলেন, টানা পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন কায়কোবাদ। মনোনয়ন পেলে আবারও নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রমাণ করবেন, তার কোনো বিকল্প এখানে নেই।
মুরাদনগরের মাটি ও মানুষের রাজনীতিতে ব্যক্তি কায়কোবাদ অতুলনীয়। বিদেশে চিকিৎসাধীন থেকেও তিনি নিয়মিত দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার পত্নী বেগম শাহিদা রফিক বলেন, দল যদি মনে করে আমি যোগ্য প্রার্থী, তা হলে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে দলই সিদ্ধান্ত নেবে।
যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। সকলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com