ডেস্ক রিপোর্টঃ ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন ভিত্তিক নামকা ওয়াস্তে, বাসায় বসে সম্মেলন করে এখন দুই আহবায়কের গ্রামের বাড়ির প্রাঙ্গণে কুমিল্লার জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপি’র সম্মেলন ডাকায় স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচ- ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির মতো দলের সম্মেলন কাউকে না জানিয়ে গোপনে করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। আগামী ১৮ নবেম্বর এ সম্মেলন হওয়ার কথা। অভিযোগ রয়েছে অনেকটা নিষ্ক্রিয় কুমিল্লা জেলা বিএনপি সম্প্রতি ঐ দুই উপজেলায় আহবায়ক কমিটি দিয়েছে তাতে সদস্য হিসেবেও রাখা হয় নি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিযুক্ত বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সমন্বয়কারী ও ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে। এতে করে চরম ক্ষোভও বিরাজ করছে। এরই প্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জেলা বিএনপিকে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানান, এভাবে বাসাবাড়িতে কমিটি বা সম্মেলন করলে তো গ্রহণ যোগ্য হবে না। বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সমন্বয়কারী শওকত মাহমুদকে নিয়েই এবং তার সাথে কথা বলেই সম্মেলন করতে হবে, কারো বাসায় সম্মেলন করলে তো হবে না।
মহাসচিব আরো জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে জেলা কমিটিগুলোকেও একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটি বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন হয়ে যাওয়ার পর মহানগর কমিটি হওয়া না হওয়া এবং কারা মহানগরে কারা জেলায় কমিটিতে থাকবেন তা নিয়ে অনেকটা দায়সারা গোছের কর্মসূচি দিয়ে চলছে বিএনপি। সম্প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন কুমিল্লার একটি কর্মসূচিতে এসে কাউকে না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন। নতুন জেলা কমিটি যখন ঘোষণার অপেক্ষায় সে মুহূর্তে জেলা কমিটি গত ঈদের দুই দিন আগে ৯ আগস্ট হঠাৎ করেই বুড়িচং ও ব্রাহ্মপাড়ায় উপজেলার আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে দেয়। তাতে বুড়িচং উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক করা হয় এটিএম মিজানুর রহমান চেয়ারম্যানকে, আর ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির আহবায়ক করা হয় হাজী জসিম উদ্দিনকে। অথচ এই কমিটিতে ৯ বছর ধরে এই দুই উপজেলায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সমন্বয়কারী ও ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে সদস্য পর্যন্ত রাখা হয়নি। কমিটিতে শওকত মাহমুদের অনুসারি দু’একজনকে রাখা হলেও তারা এর কিছুই জানেনই না। বর্তমানে এ ধরনের সব কমিটি কেন্দ্র থেকে মহাসচিবের স্বাক্ষরে করা হয়। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের উপজেলা কমিটির ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার ক্ষেত্রে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করেন কমিটি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, উপজেলা কমিটি করার ক্ষেত্রে জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহাম্মেদ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন এবং তিনি ব্রাহ্মণপাড়ায় উপজেলায় নিজে গিয়ে কমিটির পক্ষে সাফাইমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। দুই উপজেলা কমিটি এখন পর্যন্ত একটি সভাও করেননি। বরঞ্চ প্রতি রাতে আলেখার চরে জমজম হোটেলে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি দিয়ে দু’চারজন নেতা মোশতাকসহ বসে সিদ্ধান্ত নেন।
বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া থানা বিএনপি’র পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা আকস্মিক কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বহু নেতাকর্মী বাদ পড়ে যান। অনেক সিনিয়র নেতাকে জুনিয়র নেতাদের পরে রাখা হয় তালিকায়। বুড়িচংয়ের সকল ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ সভা করেন। তারা নতুন কমিটিকে প্রত্যেক ইউনিয়নে এসে সভা করে কাউন্সিল ডেকে নির্বাচিত কমিটি করার পক্ষে মতামত দেন। কিন্তু তাদের কথা রাখা হয়নি।
জানা গেছে, বিএনপির দলীয় নির্দেশ হচ্ছে, কাউন্সিলের মাধ্যমে সকল পর্যায়ে নির্বাচিত কমিটি হতে হবে। কিন্তু বুড়িচং উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে উত্তর ভারেল্লা, ময়নামতি, পীর যাত্রাপুর, রাজাপুর ও রাজীমুল ইউনিয়নে কোন কাউন্সিল ছাড়াই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বসিয়ে কমিটি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ফলে উত্তর ভারেল্লা, পীর যাত্রাপুর ও ময়নামতিতে অধিকাংশ নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করে দেন। তারা সেখানে বিক্ষোভ মিছিলও করে। নতুন থানা কমিটি মোকাম ইউনিয়ন, বুড়িচং সদর, ষোললনে এবং নতুন আহবায়কের নিজস্ব ইউনিয়ন দক্ষিণ ভারেল্লায় কাউন্সিল বা কমিটি কিছুই করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে বুড়িচং বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এডভোকেট শরীফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার কি একটা সম্মেলন হওয়ার কথা শুনছি, আবার শুনছি স্থগিত করেছে। জনবিচ্ছিন্ন ও প্রত্যাখ্যাত সুবিধাবাদীদের নিয়ে কমিটি হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, যেভাবে সম্মেলন হওয়ার কথা সেভাবে তো ওয়ার্ড ইউনিয়ন কমিটি হয় নি। সেখানে উপজেলা সম্মেলন করবে কিভাবে। আমার মোকাম ইউনিয়নে তো কোন কিছুই হয় নি।
বুড়িচং বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, আমি শুনেছি নতুন কমিটিতে আমাকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে কিন্তু আমি জানি না। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি সভাও ডাকা হয়নি। বলা হয় নি যে আমি যুগ্ম আহবায়ক। কোন কামাল হোসেন যুগ্ম আহবায়ক কেমনে বলবো।
তিনি জানান, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সম্মেলন হচ্ছে আমি সাবেক সাধারণ সম্পাদক অথচ আমি জানি না। শুনছি কথিত আহবায়ক মিজান চেয়ারম্যানের বাসায় বুড়িচংয়ের একটি সম্মেলন করার চেষ্টা চলছে। আর জসিম উদ্দিনের বাসায় ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির সম্মেলন করার চেষ্টা হচ্ছে। তারা নাকি বলছে আমাদের বিএনপি করার দরকার নাই।
ভারেল্লা ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম লাবলু বলেন, আমরা বিএনপি পক্ষেই, কমিটি যে কোনভাবে প্রতিহত করব। এ সবের মধ্য দিয়ে তাড়াহুড়া করে অনেকটা গোপনে থানার কাউন্সিল করে শেষ হচ্ছে। এই থানার বর্তমান সকল অঙ্গ সংগঠন কৃষক দল- স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল আহবায়ক কমিটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
কৃষকদলের সভাপতি সাদেক আহমেদ বলেন, কিভাবে কমিটি হল, কারা করল, তা জানেন না। নেতাদের পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপি’র কয়েকবারের সভাপতি বর্তমান আহবায়ক হাজী জসিম ব্রাহ্মণপাড়ার অভিন্ন ইউনিয়নে নামে মাত্র ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন সম্মেলন করেছে। কারও বাড়ীর বৈঠকখানায় বা চায়ের দোকানে। অধিকাংশ নেতাকর্মীকে কোন খবর দেয়া হয়নি। এর ফলে প্রতি ইউনিয়নে পাল্টা কমিটি গঠন হয়েছে এবং হচ্ছে। গত ৯ বছরে আন্দোলন সংগ্রামে যারা সম্মুখ কাতারে ছিল, তাদেরকে বাদ রাখা হচ্ছে।
শশীদল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপি সাবেক সহসভাপতি ও আহবায়ক কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, আমি তো সদস্য, আমি তো জানি না কবে সম্মেলন। গত সাপ্তাহে শুনেছি হবে এখন শুনি ১৮ তারিখ জসিম সাহেবের বাসায় সম্মেলন। তিনি বলেন, তারা হয়তো নিজেরাও জানে না করে সম্মেলন। শিক্ষিত মানুষের এই জনপদে আমরা বিএনপি’র নেতৃত্বে সামান্য শিক্ষিত, অসৎ ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগের বি-টিমের লোকজনকে চাই না। জসিমের বিরুদ্ধে গত ১১ বছরে একটি মামলাও নেই। এইভাবে কাউন্সিল হলে জনগণ মানবে না।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কমিটি হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কোন প্রভাব বিস্তার করেন নি। ১৮ নবেম্বর দুই উপজেলায় সম্মেলন হবে। সম্মেলন স্থগিতের বিষয়ে দলেও কোন নির্দেশ নেই। দল যেটা বলেছে সবাইকে নিয়ে সম্মেলন করতে। সেটাই হবে। আহবায়ক কমিটিতে শওকত মাহমুদের লোকও আছে।
এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের কাছে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি নির্দেশনা দিয়েছেন তা জানতে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক হাজী জসিম উদ্দিন জানান, তিনি তার উপজেলায় ৭২টি কমিটি করেছেন। প্রতি কমিটিতে ৭১ জন করে সদস্য আছে এবং সবগুলোই ভোটাভুটি ও সম্মেলনের মাধ্যমে হয়েছে।
তিনি জানান, একটা তারিখ নির্ধারণ করেছি সম্মেলনের কিন্তু পুলিশ সদরে সম্মেলন করার অনুমতি দিচ্ছে না। এ জন্য আমার বাড়ির পাশে বড় জায়গায় সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি দাবি করেন বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ায় শওকত মাহমুদ নামে কোন শব্দ নাই। এখন এলাকার নেতা অধ্যক্ষ মো: ইউনুস।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com