মো.জাকির হোসেনঃ কুমিল্লার এক সময়ের দুঃখ গোমতী নদী তীরের মানুষ এখন আর নদী ভাঙ্গনের আতঙ্কে বিনিদ্র রাতযাপন না করলেও শব্দদুষণের কারণে ঠিকই নিদ্রাহীন রাত কাটে। এরসাথে শিক্ষার্থীদেও পড়া-লেখা,বায়ু দুষণ,কৃষকের চাষাবাদে বিঘœতাসহ মূল প্রতিরক্ষা বাঁধটিতে প্রতিদিনই ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। আর এরসব কিছু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভিতর থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কেটে ট্রাক্ট,ট্রাক্টরযোগে পরিবহনের কারণে। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের এমনই একটি এলাকা শ্রীপুর। যেখানে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করছে।
সরেজমিন বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর এলাকা ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতীতে বর্ষাকালে যেমন প্রভাবশালীরা ড্রেজারে বালু উত্তোলনে ব্যস্ত থাকে,তেমনি শুস্ক মৌসুমে ব্যস্ত থাকে মাটি কাটায়। সম্প্রতি শ্রীপুর গ্রামের নদীর উত্তর তীরে গেলে দেখা গেছে মাটি কাটার মচ্ছব । সেখানে গতকাল রোববার দুপুরে গেলে দেখা যায় কমপক্ষে শতাধিক শ্রমিক কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক,ট্রাক্টরে ভরাট করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। মাটি কাটা শ্রমিক হোসেন জানান, এখানকার মাটি বিশেষ করে জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন হাউজিং প্রকপ্লের নীচু জমি ভরাটের কাজেও এই মাটি ব্যবহার হচ্ছে।
স্থানীয় শ্রীপুর এলাকার নদীতীরের বাসিন্দা মোসলেম,জাহাঙ্গীরসহ একাধিক লোক জানান, অবাধে মাটি কাটা ও পরিবহনের কারণে আমাদের চাষাবাদ করা ফসল হুমকীর মুখে। তারা আরো বলেন, এভাবে মাটি কাটায় একদিকে ফসলের ক্ষতিছাড়াও খোলা ট্রাক,ট্রাক্টরে করে মাটি পরিবহনের ফলে ধূলা-বালুতে মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ ,শব্দ দুষনে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখা,রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতিবাদ করার শক্তি না থাকায় কেউ কোন কথা বলতে সাহস পাচ্ছেনা। আর অজ্ঞাতকারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রয়েছে নিরব। শ্রীপুর এলাকার নদী তীরের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শ্রীপুর সংলগ্ন গাজিপুর এলাকার হান্নান, সালাহউদ্দিন , কণ্ঠনগরের মোসলেহউদ্দিন,গোবিন্দপুরের নুরুসহ ৮/১০ জনের একটি সিন্ডিকেট এই মাটি কাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে পাশ্ববর্তী ষোলনল ইউনিয়নের বালিখাড়া,কামারখাড়া , বাবুবাজার , মিথিলালাপুর , রামনগর, পূর্বহুরা, নানুয়ারবাজারসহ বিভিন্ন স্থানেও একাধিক সিন্ডিকেট দিন-রাত মাটি কাটার উৎসবে মেতে উঠেছে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান বলেন, আমরা এরইমাঝে কিছু কিছু মাটিকাটারস্থানে অভিযান চালিয়েছি। শ্রীপুরসহ আশপাশের কথা শুনেছি অচিরেই অভিযান চালাবো এবং আইনগত ব্যবস্থা নিব।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের অধীনে এখন সব নদী। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড , উপজেলা প্রশাসনসহ সবাইকেই এটা প্রতিরোধে একযোগে কাজ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে গোমতীর মুর্দানগর,দেবিদ্বার এলাকায় বেশ কিছুস্থানে অভিযান চালিয়েছি। অচিরেই বুড়িচং এলাকায় অভিযান চালাবো।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com