প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের জেরে পুরো পৃথিবী আজ স্থবির হয়ে গেছে। চারদিকে এখন শুধুই নিস্তবতা। করোনাভাইরাসের ভয়ংকর থাবায় থমকে গেছে জনজীবন।
করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায়, যেগুলো স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। চীনের উহান থেকে প্রথম উৎপত্তি হয় এই করোনাভাইরাসের। এরপর থেকে ব্যাপকভাবে তা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
আজ পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুরো পৃথিবীতে ৭ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসের থাবায় পড়েছে, যার মধ্যে সাড়ে ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসের করাল গ্রাসে মারা গেছে। এখন পর্যন্ত দেড় লক্ষ মানুষের মতো সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। যারা এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন।
আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যার ভেতর পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেছেন, ১৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ১ জন রয়েছেন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।
করোনাভাইরাস ফুসফুসের কার্যকারিতাকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে। জ্বর, গলাব্যথা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হলো এর প্রধান উপসর্গ। মানুষ থেকে মানুষে সংস্পর্শের মাধ্যমে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে অথবা এমন কোনো জায়গায় স্পর্শ করা যেখানে ভাইরাসটি জীবিত থাকতে পারে-এ সমস্ত কারণে কোনো ব্যক্তি যদি তার সঙ্গে লেগে থাকা ভাইরাস হাতের মাধ্যমে চোখ, মুখ, নাকে স্পর্শ করে তাহলে খুব তারাতাড়ি ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে এবং বংশ বিস্তার করতে থাকে। এটি সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
সাধারণত যে সমস্ত ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উপসর্গ অথবা জটিলতা দেখা না গেলেও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যাজনিত রোগী, অ্যাজমা রোগী, সিওপিডির রোগী-তাদের ক্ষেত্রে উপসর্গ বা জটিলতা অত্যন্ত খারাপ হতে পারে।
এখন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাসের অবস্থা হতে পারে ভয়ানক। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দেশে চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এখন আমাদের বাদবাকি কাজগুলো সেরে নিতে হবে। সেগুলো হলো, সম্পূর্ণ বাসায় অবস্থান করতে হবে; যদি কেউ এখন উপরের উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয় তাহলে পরিবারের অন্যদের থেকে তাকে আলাদা রাখতে হবে; কিছু সময় পর পর ন্যূনতম ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে অথবা রাব করে নিতে হবে।
সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলার কারণে করোনাভাইরাসের বাইরের লেয়ার চর্বি দিয়ে গঠিত, যা সাবান খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে ফেলে, ফলে ভাইরাসটি নিস্তেজ হয়ে যায়। সুতরাং ভাইরাসটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া হাত পিচ্ছিল হওয়ার কারণে অন্যান্য ভাইরাসও মারা যায়। হাঁচি বা কাশি এলে টিস্যু দিয়ে অথবা হাতের কনুই দিয়ে চেপে ধরা এবং ব্যবহৃত টিস্যু নির্ধারিত ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলা, যারা অসুস্থ তাদের থেকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরিধান করা। মনে রাখতে হবে এ অবস্থায় কোনোভাবে চোখ, নাক, অথবা মুখ স্পর্শ করা যাবে না যতক্ষণ না হাত পরিষ্কার করা হয় এবং মোবাইল ফোন পর্যন্ত স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
করোনাভাইরাসের এখন কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা বের হয়নি। এটি নির্ণয়ে একটি কিট ব্যবহার করে পিসিআর করে তার মাধ্যমে করোনাভাইরাসটিকে ডিটেক্ট করা হয়। রোগীকে তার উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।
যিনি আক্রান্ত হোন তাকে বিশ্রাম এবং ঘুমাতে দেওয়া, শরীরকে উষ্ণ রাখা, প্রচুর পানি পান করা, নিয়মিত উষ্ণ পানি পান করা এবং অন্য উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসকগণ চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন।
আমার আপনার সবার একটু খানি সচেতনতাই পারে এই ভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত করতে। আসুন আমরা সবাই মিলে সচেতন হই, অন্যদের ও সচেতন করে গড়ে তুলি। তাতে বাঁচবে হাজারো প্রাণ, ফুটবে হাজারো মুখে হাসি।
ডা. এস এম সহিদুল ইসলাম : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনসিস, ধানমন্ডি-২৭, ঢাকা।
(দৈনিক আমাদের সময়ে প্রকাশিত)
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com