কুমিল্লার দেবিদ্বারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীর নারায়ণগঞ্জে মেয়ের বাসায় মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান। কিন্তু শনিবার ঢাকার আইইডিসিআর থেকে ওই ব্যবসায়ীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। শনিবার বিকেলে ওই ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ি দেবিদ্বারের নবীয়াবাদের ৫টি পরিবারের ৮টি ঘর লকডাউন করা হয়।
মুঠোফোনে লকডাউনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবীর।
মৃত ওই ব্যবসায়ী দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের নবিয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি সুতার কারখানা থেকে বিভিন্ন কোম্পানিতে সুতা সরবরাহ করতেন।
এদিকে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দুটি মেডিকেল কলেজে ও একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে গিয়েও ভর্তি কিংবা চিকিৎসা করাতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় ওই ব্যবসায়ী মারা গেছেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
তার স্ত্রীর বড় ভাই জানান, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি গ্রামের বাড়ি আসেন। চলতি মাসের শুরুতেই তিনি জ্বর-ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসার পর গত বৃহস্পতিবার সকালে তাকে পরিবারের লোকজন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসকরা করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ভর্তি না করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু রাতে অবস্থার অবনতি হলে মৃতের স্ত্রী তাকে রাতেই প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। কিন্তু সেখানে তাকে ভর্তি না করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে গভীর রাতে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে সেখানেও ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়ে পরে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেয়া হয়।
কিন্তু কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা পজেটিভ রোগী ছাড়া রোগী ভর্তি না করার কথা জানালে ওইদিন রাতে তাকে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার এলাকায় মেয়ের ভাড়া বাসায় নেয়া হয়। পরে শুক্রবার ভোরে তিনি সেখানে মারা যান। শুক্রবার দুপুরে তাকে নারায়ণগঞ্জেই সৎকার করা হয়।
ওই আত্মীয় আরও জানান, করোনা আক্রান্ত হলে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে কতটা হয়রানির শিকার হতে হয় তা এই মৃত্যুর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে। আমার বোন তার স্বামীকে নিয়ে এতগুলো হাসপাতালে ঘুরেও কোথাও ভর্তি করাতে পারেনি। তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিসি টিভি ফুটেজ দেখেছি। রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই রোগী একজন নারীর সঙ্গে জরুরি বিভাগের সামনে আসার পর দু’জন ট্রলিবয় এসে তাকে হাসপাতালে ভর্তির উদ্যোগ নেন, কিন্তু ওরা (টলিবয়) বলেছে ‘ওই নারী তার রোগী নিয়ে ওয়ার্ডে না গিয়ে স্বেচ্ছায় একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় চলে যান।’ করোনা পজেটিভ হওয়ায় ওই দুই ট্রলিবয়কেও দায়িত্ব থেকে বিরত রেখে হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউএনও রাকিব হাসান বলেন, ওই ব্যক্তির বাড়ি ও আশপাশের ৮টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তার বাড়ি এবং ওই এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com