কুমিল্লার দেবিদ্বারে করোনা পরিস্থিতির কারণে এলাকার কর্মহীন ও দরিদ্র লোকদের জন্য ত্রাণ চেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নির্যাতনের শিকার হওয়া মোঃ আশেকে এলাহী নামের এক যুবক নিরাপত্তার অভাবে আত্মগোপনে আছেন বলে তার ফেসবুক ভিডিওর মাধ্যমে জানা গেছে। আশেক উপজেলার গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের মৃত আবুল কাসেমের ছেলে। শনিবার দুপুরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম খান ৪জন গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাকে তার বাড়ি থেকে তুলে এনে প্রায় ৪ঘন্টা পরিষদ ভবনে আটকে রেখে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই যুবক।
এদিকে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন কর্তৃক ওই যুবককে হুমকি দেয়া ও কক্ষে আটকে রাখার ভিডিও এবং পরে আটক থেকে মুক্ত হয়ে ভুক্তভোগী আশেক এলাহী রাতে ফেসবুক লাইভে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করলে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
ভুক্তভোগী আশেকে এলাহী সাংবাদিকদের জানান, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে স্থানীয় ১১০ জনকে কিছু ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় আরও অনেকে তার নিকট ত্রাণের জন্য আসেন। ঘটনার প্রায় ১০দিন আগে তিনি নিজ উদ্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়া ৫৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করে তাদের ত্রাণ দিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খাঁনকে অনুরোধ করেন।
চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বলেন ‘আমি কি চেয়ারম্যান হমু, নাকি এমপি হমু। মানুষের প্রতি আমার এতো দরদ কেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করার অভিযোগে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে চেয়ারম্যান আমার বাসায় চারজন গ্রাম পুলিশ পাঠায়। গ্রাম পুলিশরা আমাকে জানান, তোমার লোকজনকে ত্রাণ দেবে তাই চেয়ারম্যান তোমাকে অফিসে যেতে বলেছে। তখন সে তাদের জানান, চেয়ারম্যানই তালিকা দেখে ত্রাণ দেবেন আমার প্রয়োজন কি? তখন গ্রাম পুলিশরা বলেন, আমাদেরকে বলা আছে তোমার পা মাটিতে না লাগিয়ে তুলে নিয়ে যেতে। তাই আমি এলাকার কয়েকজন লোক নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যাওয়ার পর প্রথমে তিনি অকথ্য ভাষায় আমাকে গালমন্দ করেন। পরে আমাকে আটকে রেখে তিন দফায় মারধর করেন। তিনি আরো জানান, স্থানীয়দের সহযোগিতায় এবং ফেসবুকে চেয়ারম্যানের পক্ষে ভিডিও বার্তা দেয়ার পর ওইদিন বিকাল ৪টার দিকে আমাকে সেখান থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে জামায়াত-শিবির বানিয়ে মামলায় জড়ানো হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম খাঁন মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, এটি আমার বিরুদ্ধে একটি মহলের ষড়যন্ত্র। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাকে দিয়ে ফেসবুকে নানা আপত্তিকর লিখা লিখাচ্ছে। সে আমার বিরুদ্ধেই নয়, সরকার ও দলের বিরুদ্ধেও লিখছে। আশেক একাই এক বাড়ির ১০৭ জনের তালিকা দিয়েছে। সকল লোককে আমার পক্ষে ত্রাণ দেয়া সম্ভব নয়। শনিবার দুপুরে অফিসে ডেকে এনে বিষয়টি জানতে চেয়েছি এবং ধমকের স্বরে কিছু কথা বলেছি। কিন্তু তাকে আটকের বিষয়টি মিথ্যা।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান জানান, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি অবগত হয়েছি। একজন জনপ্রতিনিধি এ ধরনের কাজ করতে পারেনা। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১৭৯৬০০৯৭
ইমেইল: news@dailycomillanews.com
www.dailycomillanews.com